টাকার জন্য বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর, মামলাও করেছেন ছেলে
‘এ কেমন সন্তান পেটে ধরেছিলাম! যে বয়সে সন্তানের আয়-রোজগার খাওয়ার কথা; সেই সময়ে এ দুই বৃদ্ধকে থানা, পুলিশ, আদালতে ঘুরতে হচ্ছে। তার মা হয়েও আমি মারধর খাই, এই দুঃখ কোথায় বলবো? এটা কি পেটের সন্তানের কাজ? সন্তানের নির্যাতনে আজ আমরা রাস্তায় ঘুরছি। এমন সন্তান আর কাউকে দিও না আল্লাহ।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার নগরবর্ণি গ্রামে ছায়রা খাতুন (৬০)। তার অভিযোগ, তিনি ও তার স্বামী আব্দুল বারিক (৭০) ছেলের নির্যাতনের শিকার। বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান (৩৫) তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। বাবা আব্দুল বারিকের নামে দিয়েছেন দুটি চেক ডিজঅনারের মামলা। এ থেকে নিষ্কৃতি চান তারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাবা আব্দুল বারিক ও তার স্ত্রী ছায়রা খাতুন। অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান আব্দুল বারিকের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। বাকি দুই সন্তানের মধ্যে মেজ মেয়ে শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছোট ছেলে প্রবাসী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুর বারিক বুধবার (১৭ মে) অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টাসহ হুমকির অভিযোগে যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। বিচারক বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বারিক লিখিত বক্তব্যে বলেন, বড় সন্তান আক্তারুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে তাকে ও তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার- নির্যাতন করে আসছে। আক্তারুজ্জামান বিদেশ থেকে এসে একটি বাড়ি করেন। সেই বাড়িতে তারা সবাই একসঙ্গে থাকতেন। কিন্তু প্রায়ই টাকা আর সম্পত্তির জন্য বাবা-মাকে মারধর করতেন আক্তারুজ্জামান। একপর্যায়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিলে পাশেই পুরোনো একটি বাড়ির রান্নাঘরে বসবাস করছেন স্বামী-স্ত্রী। সেখানে গিয়েও টাকার জন্য তাদের মারধর করছেন ছেলে।
আব্দুল বারিক বলেন, ‘আমার বয়স ৭০ হয়েছে। এ বয়সে এসে আমরা আর মারধর খেতে পারছি না।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের আবার নতুন করে ফাঁদে ফেলেছে আক্তারুজ্জামান। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে বলে দুটি চেক সই করিয়ে দেয়। সেই অ্যাকাউন্টের ৩০ লাখ ও ৪০ লাখ টাকার দুটি চেক ডিজঅনারের মিথ্যা মামলা দিয়েছে সে। এর আগে তাকে আমি আমার চার বিঘা ১০ শতক জমি, ১০ শতক মেহগনি বাগান বিক্রি এবং পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক রেখে তাকে টাকা দিয়েছি। তারপরও টাকা শেষ হয়ে গেলেই আমাদের মারধর করে। কোনো কাজ না করে নারীদের নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ফুর্তি করে বেড়ায়। এসব সহ্য করতে না পেরে চৌগাছা থানায় তিনবার অভিযোগ করেছি। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। শেষমেশ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি।’
মিথ্যা মামলা আর সন্তানের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে সাংবাদিকদের প্রতি দুই হাত মিনতি করে বৃদ্ধ আব্দুল বারিক বলেন, ‘আমার বড় ছেলে কোনো কাজকাম করে না। সে আমার সব সহায়-সম্পত্তি একা ভোগ করার জন্য এসব করছে। বার্ধক্য বয়সে আমরা আর কোথায় যাবো? আর কত মারধর খাবো? আমরা আর মার খেতে চাই না। সে খুন করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমার বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই এসব করে বেড়াচ্ছেন। তাদের কাউকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়নি; তারা চলে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিদেশ থাকাকালীন আমার বেতনের সব টাকা বাবা-মায়ের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এখন কেউ সেই টাকার হিসাব দিতে পারছেন না। এজন্য মা-বাবা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আমিও মামলা করেছি। আদালতের ওপর তাকিয়ে আছি। আদালতই বিচার করবে।’
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, এমন কোনো ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম