কয়লা-লোহার মূল্যবৃদ্ধি
অস্তিত্ব টেকাতেই গলদঘর্ম কামারদের
শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জে একসময় কামারদের বেশ কদর ছিল। তাদের তৈরি উপকরণ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের সেই কদর আর নেই। একইসঙ্গে লোহা ও কয়লার দামও দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে কোরবানির ঈদের আগে ভরা মৌসুমেও তাদের পণ্যের আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে কামার শিল্পীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ পাটের ব্যবসাসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় পাট কোম্পানির বিভিন্ন কাজে লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যবহার হতো। সেইসঙ্গে আরও বিভিন্ন কাজে কামারদের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহৃত হতো। যে কারণে নারায়ণগঞ্জে কামারদের বেশ কদর ছিল।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে কামারশিল্পে দুর্দিন, পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকেই
শুধু শহরের উপকণ্ঠেই বাণিজ্যিক এলাকা নিতাইগঞ্জ, কালীরবাজার, চাষাঢ়া বালুর মাঠ ও খানপুরে প্রায় ১০০টি কামারের দোকান ছিল। কিন্তু এখন কাজ কমে যাওয়ায় কামারের দোকানও অনেক কমে গেছে। বর্তমানে শহরে হাতেগোনা ১০-১৫টি দোকান রয়েছে। অনেকেই পেশাও ছেড়ে দিয়েছেন।
এদিকে কয়লা ও লোহার মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার কারণে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই যেন এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসছে কামার শিল্পের ঐতিহ্য।
আরও পড়ুন: আধুনিকতার ছোঁয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে কামার শিল্প
শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার কামার নিধিরাম সর্দার বলেন, কিছুদিন আগে একেবারেই কাজ ছিল না। ঈদ আসছে তাই কিছু কাজ আসতে শুরু করছে। এখন ঈদের সময়ও আগের মতো কাজ পাওয়া যায় না। মাস গেলেই দোকানের ভাড়া দিতে হয়। কোনো রকম চলে যায়। সারাদিন কাজ করেও কোনো টাকা পাই না।
তিনি আরও বলেন, আগে কাঠ ও কয়লা ছিল ৬০ টাকা টিন, এখন ১০০ টাকা। ইটভাটার কয়লা এক বস্তা ৩ হাজার টাকা দিয়ে আনতে হয়। আগে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতাম। রড ছিল ৪৫ টাকা কেজি, এখন ৯৫ টাকা। এভাবে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ক্রেতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইটভাটায় কয়লা সংকট, বিপাকে মালিক-শ্রমিকরা
জীবন কর্মকার নামে আরেক কামার বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। এখন আর আগের মতো কাজকর্ম পাই না। কাজকর্ম অনেক কমে গেছে। দিনের পর দিন সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। দাম বাড়ার কারণে এখন আর পোষানো যায় না। ঈদ ছাড়া সারা বছরই বসে সময় পার করতে হয়। কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কামারদের বিষয়ে গরিব এলাকা দেখে বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও হয়তো প্রকল্প নেওয়া হবে। আগামী অর্থবছরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এরইমধ্যে জরিপ করেছি। জরিপের তথ্য পাঠানো হয়েছে। আমাদের প্রকল্প চলমান।
এফএ/এএইচ/জেআইএম