ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সিটি করপোরেশনে থেকেও লাগেনি শহুরে ছোঁয়া

জেলা প্রতিনিধি | গাজীপুর | প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ১৮ মে ২০২৩

সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের হাঁক-ডাক। চারদিকে সুনসান নীরবতা। ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হন না। আশপাশের বাড়িগুলোতে নেই কোনো কোলাহল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে কিছু মানুষের আড্ডা। যেন পুরো গ্রামীণ পরিবেশ।

দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এসব অঞ্চলের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা না পেলেও দিচ্ছেন সিটির হোল্ডিং ট্যাক্স। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে গাজীপুরের দুটি পৌরসভা এবং ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। যার আয়তন ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার। পুরো সিটি করপোরেশনকে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। পরে গঠন করা হয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুরো মহানগরীতে নয়টি থানা স্থাপন করা হয়।

jagonews24

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভুরুলিয়া, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাজুলিয়া এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে হাতিয়াব ও ভাওরাইদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জোলারপাড়, বিপ্রবর্তা, কাউলতিয়াসহ অনেক এলাকা এখনো মূলত গ্রাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব এলাকার প্রধান সড়কগুলো পাকা হলেও ছোট সড়কগুলো এখনো মাটির বা ইটের সলিংয়ের। নেই কোনো ন্যূনতম নাগরিক সেবা। গ্রাম হওয়ায় গ্যাসের ব্যবস্থাও নেই। বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও সেবা মিলছে খুবই কম। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে কখন আসবে তার নিশ্চয়তা থাকে না।

নগরীর মজলিশপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের পেশা এখানো কৃষি। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, খাল-বিল আর নদী দিয়ে ঘেরা এলাকার মানুষ নগরীর সুবিধা পায়নি। পাওয়ার মধ্যে কেবল পাকা রাস্তা পেয়েছেন। যার ফলে চলাচলে সুবিধা মিললেও নগরীর অন্য সেবা থেকে আমরা অনেক দূরে।

একই এলাকার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কৃষি নির্ভর মজলিশপুর এলাকার অনেকে মৎস্যজীবী। তবে নদী ও খাল-বিলের পানি কলকারখানার বর্জ্যে দূষিত হওয়ায় মাছ যেমন আগের মতো নেই তেমনি ধান উৎপাদনও কমে গেছে। এলাকায় নতুন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় বেকার সমস্যা বাড়ছে।

নগরীর পাজুলিয়া এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, গাজীপুর মহানগরীর সর্ব উত্তরের এলাকা হচ্ছে পাজুলিয়া। এখানে এখনো ঘন বন জঙ্গলে আবৃত অনেক এলাকা। সন্ধ্যার পর শিয়াল ও বন বিড়ালের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। রাস্তায় বের হলে অনেক শিয়ালের দেখা মেলে। একটি ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শহরের কাছের এলাকা হলেও এলাকাটি অবহেলিত। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলেও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়নি।

জোলারপাড় এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, আমরা সিটির অধিবাসী হলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। এরপরও আমাদের মাথায় প্রতিবছর চাপানো হচ্ছে ট্যাক্সের বোঝা। নগর হওয়ার পর আর্থিক উন্নতি না হলেও ট্যাক্সের বোঝা থেকে রেহাই নেই।

গাজীপুরের বিশিষ্ট আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নগরীর অবহেলিত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া নাগরিক সেবারও সুষম বণ্টন করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ঘরে নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত স্যানিটেশন। এসব এলাকার দিকে নজর দিতে হবে। নাগরিক সেবা না পাওয়া এসব এলাকার মানুষের জন্য ট্যাক্সের বোঝা কমানো প্রয়োজন।

jagonews24

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, মহানগরী এলাকায় শহরকে শহর করা হচ্ছে, আর গ্রাম গ্রামই থেকে যাচ্ছে। নগরীর প্রভাবশালী কাউন্সিলররা তাদের নিজ এলাকায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিচ্ছেন। উন্নয়ন কাজে বৈষম্য করা হচ্ছে। এগুলো আমরা পরিষদের মাসিক সভায় বললেও কোনো কাজ হয় না। অনেক কাউন্সিলর তাদের এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি।

কলেজ শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, নগরীতে কেবল পুরাতন স্কুল কলেজগুলোতেই উন্নয়ন হচ্ছে। নতুন করে নগরীর অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে না বা শিক্ষার উন্নয়ন বঞ্চিত। এতে অবহেলিত অঞ্চলগুলোর শিক্ষার্থীরা আধুনিক ও ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা থেকে বঞ্চিত থাকছে। ফলে শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নিতে হবে।

২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের কাছে সিটি করপোরেশন এলাকায় সুষম বণ্টনের মাধ্যমে উন্নয়নের বৈষম্য না করে সবাইকে সমান বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান নগরবাসী।

এসজে/জিকেএস