ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসবে শাহজালালের মাজারে ভক্তের ঢল

ছামির মাহমুদ | সিলেট | প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ১৭ মে ২০২৩

সকাল থেকে সিলেটে বৃষ্টি। এই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই হজরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহে ৭০৪তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসবে যোগ দেন হাজারো ভক্ত।

আগামী ৮ ও ৯ জুন হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে ওরস অনুষ্ঠিত হবে। ওই ওরসের শিরণি রান্না হবে আজকের উৎসব থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ি দিয়ে।

হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে প্রতি বছরের ২৬ শাওয়াল জোহর নামাজ শেষে নাঙ্গা তলোয়ার, দা-কুড়াল ও লাল-ঝা হাতে হাজার হাজার নারী-পুরুষের দীর্ঘ মিছিল ছুটে যায় নগরের লাক্কাতোড়া টিলায় লাকড়ি আনতে। মাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে ওই বিশাল টিলা থেকে গাছ ও এর ডালপালা কেটে শাহজালাল (রহ.) মাজারে নিয়ে আসেন।

এ সময় ‘শাহজালাল বাবাকি জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়াকি জয়’, ‘লালে লাল বাবা শাহজালাল’, ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ধ্বণীতে প্রকম্পিত হয় সিলেট নগর। টিলা থেকে লাকড়ি সংগ্রহের পর ওই লাকড়ি দরগাহ পুকুরে ধুয়ে এগুলো সংরক্ষণ করা হয়। ৭০৩ বছরের অধিক সময় ধরে চলা ওরসের এই প্রাক আনুষ্ঠানিকতা ‘শাহজালালের লাকড়ি তোড়া উৎসব’ নামে পরিচিত।

বুধবার (১৭ মে) দুপুর থেকে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর হাজারো ভক্ত লাল কাপড় মাথায় বেঁধে ও লাল পতাকা হাতে দরগাহ শরীফে সমবেত হয়ে জোহরের নামাজের পর মিছিল সহকারে লাকড়ি সংগ্রহে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর লাকড়ি নিয়ে দরগাহ শরীফে ফিরে আসেন।

দরগাহের সরেকওম মোতাওয়ালি ফতেহ উল্লাহ আল আমান জাগো নিউজকে জানান, শাহজালাল (রহ.) এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০৩ বছর ধরে ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। সংগ্রহ করা এসব লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি দিয়েই ওরসে শিরনি রান্না করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে শাহজালাল রহ. ভক্ত আশেকানরা এতে অংশ নিয়েছেন।

শাহজালাল রহ. এর জীবনী ও ইতিহাসের বরাত দিয়ে ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি আবদুল করিম কিম জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ৭০৩ বছর আগে সিলেট বিজয় দিবসের কয়েক দিন আগে ২৬ শাওয়ালের এই দিন এক কাঠুরে আসেন হজরত শাহজালাল (রহ.) এর কাছে। কাঠুরে জানান ঘরে তার বিবাহযোগ্য ৫ মেয়ে রয়েছে। সে কাঠুরে নিচু জাতের হওয়ায় কেউই তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাচ্ছে না। এ কথা শুনে শাহজালাল (রহ.) কাঠুরেকে সিলেট বিজয় দিবসে দরগায় আসার কথা বলেন।

পরবর্তী সিলেট বিজয় দিবসে সঙ্গী আউলিয়া, ভক্ত ও আশেকানরা আসলে শাহজালাল (রহ.) সবাইকে নিয়ে লাক্কাতুড়া বাগানে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন। ফিরে এসে তিনি উপস্থিত ভক্তদের কাছে জানতে চান তারা আজ কী কাজ করেছে। উত্তরে সবাই বলেন তারা আজ কাঠুরিয়ার কাজ করেছে।

এরপর শাহজালাল সবাইকে কাঠুরের দুঃখের কথা বললে উপস্থিত অনেক ভক্ত কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখান থেকে কাঠুরে তার মেয়েদের জন্য বর পছন্দ করেন। এ ঘটনার পর থেকে সাম্য ও শ্রেণিবৈষম্য বিরোধী দিবস হিসেবেও দিনটি পালন করেন ভক্তরা।

ছামির মাহমুদ/এফএ/এএসএম