ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় মোখা

৪ দিন খোলা আকাশের নিচে সেন্টমার্টিনের দুর্গতরা, সুপেয় পানির সংকট

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ১৭ মে ২০২৩

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তরা তিনদিনেও মাথাগোজার ঠাঁই করতে পারেননি। সৌরপ্যানেল নষ্ট ও লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় চালু করা যায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। লবণাক্ত পানি প্লাবনে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমাংশের বীচ এলাকায় সুপেয় পানির সংকট শুরু হয়েছে।

এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ এসে পৌঁছায়নি দ্বীপে। বিধ্বস্ত বাড়িঘরের বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে মানবেতর সময় কাটাচ্ছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো সেবা মিলছে না ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান এবং খাদ্য সংস্থানের দাবি করেছেন দুর্গত মানুষগুলো।

একইভাবে উপজেলার আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপের তিনটি ওয়ার্ডেও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের মধ্যে একই অবস্থা বিরাজ করছে। বাতাসের তীব্রতায় তার ছিঁড়ে গিয়ে ২০টির অধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় তিনদিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি এখানেও। উপড়ে যাওয়া গাছগুলো সরানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দুর্গতরা। স্থল যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এনজিও সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। ফলে এখানে খাদ্য সংকট নিয়ে কারও অভিযোগ নেই।

cox-3.jpg

ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতায় দমকা বাতাসে টেকনাফের হোয়াইক্যং মিনাবাজার এলাকায় সদ্য তৈরি মুজিববর্ষের বেশ কয়েকটি ঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো আবার দাঁড় করাতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন দুর্গতরা।

জেলা প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

তথ্য মতে, ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার অতিক্রম করে মিয়ানমারের সিটওয়ে এলাকায় আঘাত হানে। বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমকালে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এবং একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে তাণ্ডব চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দেড় হাজার পরিবার। কিন্তু তিনদিন পার হলেও পর্যাপ্ত সহযোগিতা দ্বীপে পৌঁছায়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

তবে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

cox-3.jpg

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ত্রিপল দিয়ে কোনো রকম আশ্রয় তৈরি করেছে। অনেকে ঘরের ওপর ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিজেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এখনো সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ দ্বীপে এসে পৌঁছায়নি। তবে শুকনো খাবার দিয়ে অনেক সংস্থা সহযোগিতা করছে।

তিনি আরও বলেন, দ্বীপের বিচ এলাকার পাশের গ্রামগুলোতে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। সরকারি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকায় প্রাথমিক সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে দ্বীপবাসীকে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, বিজিবি এবং নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিধ্বস্ত এবং আংশিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১২০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের জন্য টিন সরবরাহ করছে জেলা প্রশাসন। আজ-কালের মধ্যে এসব নির্মাণ সামগ্রী সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা স্বীকার করলেও পানি সংকটের কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান মুজিব।

cox-1.jpg

টেকনাফের আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপে স্থল যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখনো সরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো এখানেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।

সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবদুল মান্নান বলেন, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় দেড় হাজারা ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আরও দেড় হাজারের মতো বাড়িঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখনো সরকারি কোনো ত্রাণ পাইনি। তবে বেসরকারি সংস্থা ১৮০টি পরিবারকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারিভাবে টিন বা সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। শুকনো খাবারের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য টিন ও অন্য সহযোগিতা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন।

জেলা প্রশাসনের গড়া কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা এসে পৌঁছায়নি। এরপরও সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪০০ বান টিন, ঘর প্রতি তিন হাজার নগদ টাকা বিতরণ করতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বুধবার তা দ্বীপে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যায়। দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

bgb

সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিজিবি

ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিদর্শন করে দুর্গতদের ত্রাণ দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে টেকনাফ ২ ব্যাটেলিয়নের সেন্টমার্টিন বিওপির সহায়তায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮০০ পরিবারকে ত্রাণ দেন তিনি। এ সময় বিজিবির সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিওয়ন কমান্ডার, টেকনাফ ব্যাটেলিয়ন অধিনায়কসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

cox-3.jpg

সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানবিক সহযোগিতায় নৌবাহিনী

সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মঙ্গলবার দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে চিকিৎসা ওষুধ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ছোলা, লবণ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নৌ-বাহিনীর এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌ-বাহিনীর সহকারী পরিচালক সাইদা তাফসী রাবেয়া লোপা।

এসজে/এমএস