পটুয়াখালী
১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে উপকূলবাসী
ঝড়ের খবরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এ এলাকার প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
স্থানীয়রা জানান, নদী গর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পিঁপড়াখালী গ্রাম। শত বছর ধরে নদী ভাঙনে এ এলাকার শত শত একর জমি, বসতবাড়ি, বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিলীন হয়েছে একাধিক বেড়িবাঁধ। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে অনেককে। এবার ঝড়ের খবরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই এলাকার মানুষ।
লাইলি বেগম নামের পিঁপড়াখালী এলাকার এক নারী বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি গাবুয়া। আমাদের বাড়ির মুরুব্বিগো কোনো কবর আর অবশিষ্ট নাই। আমরা যে একটু কবর জিয়ারত করমু হেরও সুযোগ নাই। আমাদের জায়গা জমি সব শেষ। এহন বইন্যার খবর পাইছি কিন্তু আমরা কি করমু, কোথায় যামু, আমাদের আশপাশে তো আশ্রয়কেন্দ্রও নাই। এহন যে বেড়িবাঁধ দেতে আছে হেও তো কয়দিন পর শ্যাষ হইয়া যাইবে। সরকার যদি একটা স্থায়ী বাঁধদেতে, তয় মনে হয় বাইচা থাকতে পারতাম।’
আরও পড়ুন: বরগুনায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কে উপকূলের মানুষ
একই এলাকার আব্দুর রহমান (৭৫) বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার বড়ি সরিয়ে নিয়েছি। মাথায় কইরা চাল সরাইছি। ছোট বেলায় ৫-৭ কানি জমি চাষ করছি , দুই তিনজন মানুষ রাইখা কাজ করাইছি কিন্তু এহন এক কড়া জমিও নাই। এহন বাড়িও শ্যাষ, এলাকাও শ্যাষ। শুধু বাড়িডা আছিল এখন সেই বাড়ির উঠান দিয়া বেড়িবাঁধ যাইতেছে। নদী ভাঙনের কারণে গরিব হইয়া গেছি, দুইডা পোলারে শিক্ষিত করতে পারিনাই। এখন তো আবার গুনি বইন্যা আইছে, কি হইবে কইতে পারি না।’
শুধু মির্জাগঞ্জ উপজেলা নয় জেলার কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা উপজেলার বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেসব এলাকার মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকে জমি থেকে মাগডার, বাদাম, মিষ্টি আলুসহ এ মওসুমের ফসল ঘরে তুলে নিয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও অনেক এলাকা এখনও অরক্ষিত।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, পটুয়াখালীর ৩৬ পোল্ডারে এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ১০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে যা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গোলখালী ও পিঁপড়াখালীতে কাজ শুরু করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে বাকি এলাকা গুলোতেও কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঝড়ের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। ইতোমধ্যে তারা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মুজত রেখেছেন। কোনো এলাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক যাতে প্রতিরোধ করা যায়।
আব্দুস সালাম আরিফ/আরএইচ/এমএস