‘যতই ভালো পরীক্ষা দেন টাকা না দিলে লাইসেন্স পাওয়া কঠিন’
কুড়িগ্রামে বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার অভিযোগ তুলেছেন সেবাপ্রার্থীরা। অনলাইন আবেদনে লার্নারের কাগজ হাতে পেলেও মূলত পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অতিরিক্ত টাকা না দিলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না।
অভিযোগ উঠেছে, অফিসে ঢুকতে গেলেই দালাল চক্র আর অসাধু কর্মচারীর খপ্পরে পড়ে নির্ধারিত ফির বিপরীতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও অফিসের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার পরও অতিরিক্ত ৭-১৪ হাজার টাকা গুনতে সেবাপ্রার্থীদের। টাকা না দিলে লাইসেন্সের জন্য ঘুরতে হয় মাসের পর মাস বছরের পর বছর।
কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস থেকে ২ হাজার ৪৫৯টি মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে অনলাইনে কতজন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন সে তথ্য দিতে পারেনি বিআরটিএ অফিস।
মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, গত বছর থেকে লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করছি। লার্নার করার পর পরীক্ষা দিয়ে বারবার ফেল করছি। পরে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এখানকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দিয়ে অবশেষে আজ লাইসেন্স হাতে পেলাম। যতই ভালো পরীক্ষা দেন না কেন অতিরিক্ত টাকা না দিলে লাইসেন্স পাওয়া কঠিন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের রাজু আহমেদ বলেন, একটি মোটরসাইকেল লাইসেন্সের জন্য অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমি লার্নারের আবেদন করে এক বছর পর লাইসেন্স পেলাম। নির্ধারিত ফি ৩১০০ টাকা হলেও আমার ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাইরের দালাল না ধরে অফিসের পিয়নকে ধরলে কাজ দ্রুত হয়। মাধ্যম ছাড়া লাইসেন্স পাওয়া মুশকিল।
অফিসের বাইরে বসে আছেন মো. বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। কথা বলে জানা যায় তিনি অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দেন।
বেলাল বলেন, অনলাইন করেন, ফি জমা দেন আর যতই পরীক্ষা দেন না কেন ৮-১০ হাজার টাকা খরচ না করলে সহজে লাইসেন্স পাবেন না। টাকা পয়সা রেডি করে আসেন কোথায় কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমি করে দেবো। আপনি এসে শুধু ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে যাবেন। ব্যাস অল্প সময়ে লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।
কুড়িগ্রাম সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. সাজ্জাদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরযান রেজিস্ট্রেশন খুব সহজ। অনলাইনে লার্নারের আবেদন করে পরীক্ষা দিয়ে সহজে বাড়িতে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন। অফিসে শুধুমাত্র ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য একদিন আসতে হয়। লাইসেন্স ইস্যু হলে আমরা ডাকযোগ পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন অনলাইনে নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিজেই ডাউনলোড করে নিতে পারছে গ্রাহকরা।
অসাধু কর্মচারী ও দালাল চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসের কোন কর্মচারীর এ ধরনের কাজ করার অপশন নাই। প্রমাণ থাকলে দেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অফিসের বাইরে কেউ যদি লেনদেন করে এর জন্য আমরা দায়ী না।
ফজলুল করিম ফারাজী/এসজে/এমএস