ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কয়লায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

রাজীবুল হাসান | উপজেলা প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) | প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ০১ মে ২০২৩

দেশের কয়লা বেচাকেনার অন্যতম হাট ভৈরবের মেঘনা ফেরিঘাট। আনুমানিক ১৬-১৭ বছর আগে ভৈরবের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় রেলওয়ে ভূমিতে গড়ে উঠেছে এ হাট। এ হাট থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক কয়লাবোঝাই ট্রাক যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ইটভাটা ও শিল্পকারখানায়। প্রতিদিন লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকা। আর কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের।

জানা গেছে, প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন নৌকাযোগে ভারত থেকে ভৈরবের এ ঘাটে কয়লা আনা শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে সারাদেশে এ হাটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ইটভাটা ও বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কয়লা সরবরাহ শুরু হয়। একপর্যায়ে ভারত কয়লা সরবরাহ বন্ধ করলে দেশের বড় শিল্পপতিদের আগমন ঘটে এ ঘাটে। তাদের হাত ধরে বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়া থেকে ভৈরবে আসছে কয়লা।

jagonews24

সরেজমিন দেখা যায়, বিদেশ থেকে কয়লাভর্তি জাহাজ ঘাটে ভিড়ছে। শ্রমিকরা জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করছেন। সেখান থেকে আবার ট্রাকভর্তি করে কয়লা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফেরিঘাটে জায়গায় জায়গায় কয়লার স্তূপ।

আরও পড়ুন: ভয়ংকর বশিকপুর

কথা হয় সুনামগঞ্জের বিশম্ভবপুর থানার বাসিন্দা কয়লাশ্রমিক আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর কয়লাশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। ঘাটে বিভিন্ন দল রয়েছে। তেমনি তাদেরও ১৫-২০ জনের দল আছে। একেকটি দল জাহাজ আনলোড ও ট্রাক লোডের কাজ করে। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করি।

jagonews24

আল-আমিন বলেন, ‘এক ট্রাক কয়লা লোড করলে তিন হাজার টাকা মজুরি পাওয়া যায়। যদি পর্যাপ্ত কাজ থাকে তাহলে প্রতিদিন ২০-৩০টি ট্রাক লোড করতে পারি। তবে মাঝে মধ্য এমনও সময় যায় এক ট্রাকও লোড করতে পারি না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা কয়লাশ্রমিক মো. সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সে অনুযায়ী মজুরি বাড়েনি। সারাদিন যদি ভালো কাজ থাকে তাহলে একেকজন দেড় হাজার থেকে ১৭০০ টাকা রোজগার করতে পারি। তবে কয়লার কাজ সারাবছর থাকে না। ছয়মাস এ কাজ থাকে। বাকি সময় অন্য কাজ করতে হয়।’

আরও পড়ুন: ফেলে দেওয়া কলাগাছে লাখ টাকা আয়

jagonews24

ভৈরবের গোছামারার বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন গ্রামের বাড়ি থেকে এসে কয়লার কাজ করি। সারাদিন কয়লার কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়েই বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের খরচ চলে। তবে সবকিছু দাম যে হারে বেড়েছে, মজুরিটাও যদি কিছু বাড় তো তাহলে ভালোভাবে চলতে পারতাম।’

ফেরিঘাটে কয়লা বিক্রেতা সারোয়ার আহমেদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে কয়লা বেচাকেনার ব্যবসা করছেন। এখানে সাধারণত ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া এ চার দেশ থেকে কয়লা আমদানি হয়। এসব কয়লা ফিতা ও স্কেল হিসেবে পরিমাপে বিক্রি হয়। আমদানি করা ভারতীয় কয়লা প্রতি টন ২২৫০০-২৩৫০০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার কয়লা ২০০০০-২১৫০০, আফ্রিকার কয়লা ২২০০০-২৩০০০ ও অস্ট্রেলিয়ার কয়লা ২৪০০০-২৫০০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কয়লা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালের দিকে এ ঘাটে কয়লা বেচাকেনা শুরু হয়। এরপর থেকে দিন দিন ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে। তবে ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় রেলওয়ের জায়গায় কয়লা ডাম্পিং করে বেচাকেনা করা হচ্ছে। এখানকার কয়লা লক্ষ্মীপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ইটভাটায় যায়।

jagonews24

আরও পড়ুন: বাঁশি তৈরির গ্রাম দেবীপুর

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার কয়লা বেচাকেনা হয় এ ঘাটে। কয়লা ঘাটকে কেন্দ্র করে ১৫০-১৬০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি ভৈরবের কয়লা ব্যবসার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণে সহযোগিতা করে তাহলে এ ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে।

কয়লার দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন বলে জানান ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাট কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ ইবনে সোলায়মান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে যেসব ব্যবসায়ীরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন এখন সেখানে দ্বিগুণ পুঁজি লাগছে। অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে এত পুঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে আমদানি করছেন তারা আমদানি করা কয়লা বিক্রির ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। যার মাধ্যমে কয়লার দাম নির্ধারণ করে বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে ইটভাটার মালিকরা বাড়তি দামে কয়লা কিনে তাদের ভাটা চালু করতে পারেননি।

jagonews24

আরও পড়ুন: ২৯ বছর ধরে প্লেন ওড়ে না কুমিল্লা বিমানবন্দরে

ভাটা বন্ধ থাকার প্রভাবে ইটের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এভাবে যদি দেশে একের পর এক ইটভাটা বন্ধ হতে থাকে তাহলে কয়লা ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুব সুবিধার হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ভৈরব চেম্বারের সভাপতি আলহাজ হুমায়ুন কবীর জাগো নিউজকে বলেন, কয়লা ব্যবসা জমজমাট। এখানে ৫-৬ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকার এখান থেকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব পাচ্ছে। তবে কয়লা বাজারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। বিশাল এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রকে আরও প্রসারিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গার দাবি জানান তিনি।

এসআর/জিকেএস