‘বাবাকে মেরে ফেলেছে, তাই বাড়িতে আসেনি’
সাত বছর বয়সী নুহাদ রাতে বাবার কোলে ঘুমাতো। কিন্তু গতরাতে সে তার বাবাকে কাছে পায়নি। বাবা কোথায় জানতে চাইলে নুহাদের সোজা কথা, ‘আব্বুকে মেরে ফেলেছে’।
কেন মেরে ফেলেছে- এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো জানা নেই নুহাদের। তবে তার বাবা আর ফিরে আসবে না, এটা নিশ্চিত ছোট্ট এই শিশুর কাছে। নুরাজ নামের ৮ মাস বয়সী আরও এক ভাই আছে নুহাদের।
নুহাদের বাবা লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান। মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নোমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম নিহত হন। রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার পোদ্দার বাজারের নাগেরহাট সড়কের মাদরাসাতুল আবরারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে দেড়টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের উষিয়াকান্দি গ্রামের যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। তাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার স্ত্রী শ্রাবনীসহ পরিবারের সদস্যরা। আহাজারি করছেন, মূর্ছা যাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত নোমান-রাকিবের জানাজায় মানুষের ঢল
নিহত নোমানের ৮ বছর বয়সী শিশুপুত্র নুহাদ বলে, ‘বাবা আমাকে নিয়ে ঘুমাতো। তাকে মেরে ফেলেছে কাশেম জেহাদী। গুলি করেছে। তাই রাতে বাড়িতে আসেনি’।
দুই শিশু সন্তানের সঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান/ ছবি- সংগৃহীত
স্থানীয় সূত্র জানায়, বশিকপুর ইউনিয়নের উষিয়াকান্দি গ্রামের বড় বাড়ির মৃত আবুল কাশেমের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান। তার বড়ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, মেঝোভাই মিজানুর রহমান মাকছুদ ইতালি প্রবাসী। নোমান ২০১৩ সালে বশিকপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০২২ সালের ২ অক্টোবর ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্প্রতি নোমানকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়।
নোমানের ভাগ্নি উর্মি বেগম জানান, গত ৫ এপ্রিল নোমান ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে যান। ২০ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরেন। ঢাকার বাসা থেকে ২১ এপ্রিল ঈদে গ্রামের বাড়িতে আসেন নোমান। ২৬ এপ্রিল ঘটনার দিন দুপুরে নোমান বাসা থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেননি।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা
এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীকে দায়ী করে নোমানের ভগ্নিপতি মো. শামছু বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাশেম জেহাদী নোমানকে টার্গেট করেন। তাকে হত্যার হুমকিও দেন।
ঘটনার আগে তারেক আজিজ নামে এক ছেলে নোমানকে ফোন করে জরুরি প্রয়োজন বলে ডেকে নিয়ে যান। রাকিবসহ মোটরসাইকেলে করে পোদ্দার বাজারে যাওয়ার পথে দুইজনকে গুলি করা হয়।
মো. শামছু অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডে কাশেম জেহাদীর সহযোগী শরীফ, নিশান ও মোটা বাবলু ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা চাই পুলিশ প্রশাসন হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনবে।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদী ও সাবেক যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে আবুল কাশেমকে হারিয়ে বিজয়ী হন যুবলীগ নেতা নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান।
কাজল কায়েস/কেএসআর