ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সিন্ডিকেটের কবলে মোংলা প্রধান কাঁচাবাজার

আবু হোসাইন সুমন | মোংলা (বাগেরহাট) | প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

রমজানের ঝাঁজ এখনো কমেনি মোংলার প্রধান কাঁচাবাজারে। নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে রমজানের সময়ের বাড়তি দামেই। এছাড়া কোনো কোনো পণ্য বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকালে পৌর শহরের প্রধান বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে শসা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে। এখন রমজানের পরও এর সেই একই দাম রয়ে গেছে। কাঁচামরিচের দাম রমজানে ছিল ১০০ টাকা, এখনও তা বিক্রি হচ্ছে ওই দামেই। আর আলুর কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। দু’এক দিনের মধ্যে আলুর দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

jagonews24

তবে বেগুনের দাম একটু কমে এসেছে ৪০ টাকায়। লাউ ও পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। বাজারে নতুন উঠেছে কাঁকরোল যা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পটল, ঢেঁড়শ, ঝিঙ্গা, কুশি, ধুন্দল ও কুমড়াসহ অন্যান্য সবজি রয়ে গেছে সেই রমজান মাসের চড়া দামেই।

স্থানীয় ক্রেতারা বলেন, আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম বেশি। এ বাজারে গ্রামের চাষিরা এলে তাদেরকে বসতে দেওয়া হয় না। কারণ তারা কম দামে সবজি বিক্রি করে থাকেন। তারা বাজারে মালামাল নিয়ে এলে সিন্ডিকেট চক্র মালামাল কেড়ে নিয়ে ইচ্ছামতো দাম দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে দেন বলেও অভিযোগ তাদের।

তবে বিক্রেতারা বলেন, আড়ৎ থেকে যে দরে দেওয়া হয় তার চেয়ে সামান্য কিছু বাড়িয়ে আমরা বিক্রি করে থাকি। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করে আসছি।

পৌর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে সপ্তাহে দুইদিন কাঁচামালের হাট বসে। সেখানে পৌর শহরের প্রধান বাজারের তুলনায় দাম কম। তাই একটু দূরে হলেও মানুষ যান সেখানে। একই শহরের হাট-বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এছাড়া দিগরাজ, চিলা, বাঁশতলা, মিঠাখালী, মোল্লারহাট, চটেরহাট, মাদুরপাল্টা হাট অন্যান্য হাটগুলোতে মোংলার প্রধান বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম কম।

অনুসন্ধানে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা কাঁচাবাজারকে ঘিরে রয়েছে ৮-১০ জনের সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের মূল হোতা আলম তালুকদার। তার সঙ্গে রয়েছেন কবির, ফিরোজ, জামাল, নাসির, রফিক, সুমন, জাহিদ। এ চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন পুরো বাজার। সিন্ডিকেট চক্রটি খুলনা, যশোরের সাতমাইল, আঠারোমাইল, কেশবপুর ও সাতক্ষীরার তালা, শাহাদাতপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য কিনে আনেন। এরপর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি লিখিয়ে মোংলায় সিন্ডিকেট আড়তে এনে তার ওপর আবার নতুন করে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। আর বিক্রেতারা সিন্ডিকেট চক্রের আড়ৎ থেকে যে দামে পণ্য কেনেন তারওপর ৫-১০ টাকা বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।

শুধু তাই নয়, সিন্ডিকেট চক্রটি বিভিন্ন এলাকা থেকে যে পণ্য আনেন তা বাজারে একদিনে না ঢুকিয়ে গ্যাপ দিয়ে ঢুকিয়ে বাজারে কাঁচামালের সংকট তৈরি করেন। আর এ সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেটটি তাদের অর্থ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

মোংলা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলম তালুকদার বলেন, এসব উড়ো কথা, আপনাদের লেখালেখির থাকলে লিখতে পারেন।

jagonews24

উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরআলম শেখ বলেন, বাংলাদেশে একবার যার দাম বাড়ে তার দাম কমার নজির নেই। প্রশাসনের যারা আছেন তাদের নজরদারীর অনুরোধ জানাচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হওয়াতে দরিদ্র মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এছাড়া ক্রয় ক্ষমতা সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাজেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার মনিটরিং জরুরি।

সিন্ডিকেট চক্র ও বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. রহমান বলেন, সিন্ডিকেট যারা করে তাদের দৌরত্ম এত বেশি বেড়েছে যে সিন্ডিকেট নেই এমন একটা জায়গা নেই। এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম শেষ করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার এবং আমার যে দায়িত্ব আছে তা শতভাগ পালন করবো। আর যার নির্বাহী ক্ষমতা আছে জরিমানা করার তার সঙ্গে আমি এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবো এবং অনুরোধ করবো যাতে অচিরেই বাজার মনিটরিং করাসহ এই দূরাবস্থা থেকে জনগণ যাতে বাঁচতে পারে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাস বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/জিকেএস