হাওরের ধান দ্রুত ঘরে তুলতে মাইকিং, দুশ্চিন্তায় কৃষক
ভাটির জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরের বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। সেই ধান পহেলা বৈশাখ থেকে কাটতে শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ আবহাওয়া অফিসের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল নামার পূর্বাভাসে এখন পুরো হাওর এলাকা থমকে গেছে। এমনকি হাওরের সব ধান ঘরে তুলা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরের ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হলেও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি। বাড়ছে নদীর পানিও। ফলে আতঙ্কে আর উৎকণ্ঠা নিয়ে ধান কাটছেন কৃষকরা। উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি-না সেটা নিয়েও আছে শঙ্কা।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী শনিবারের পর থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির আভাস আছে। তাই ফসলহানির ঝুঁকি এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তিন দিন ধরে ১৩৭টি হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার আহ্বান জানিয়ে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে ।
হাওরের কৃষকরা জানান, ধান দ্রুত কাটার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু এত কম সময়ে সব ধান ঘরে তোলা সম্ভব নয়।
করচার হাওরের কৃষক সোনা মিয়া বলেন, হাওরের ধান কাটা মাত্র শুরু করেছি। প্রশাসন থেকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে দ্রুত ধান কাটতে। কিন্তু এত ধান কম সময়ে ঘরে তোলা সম্ভব হবে না।
শনির হাওরের কৃষক তারা মিয়া বলেন, হাওরের ধান ঘরে তোলা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। কি করে বৃষ্টিপাত শুরুর আগে ধান ঘরে তুলবো বুজতে পারছি না।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এখান থেকে ধান উৎপাদন হবে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টন। যা থেকে ৯ লাখ ২ হাজার টন চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা যাতে হাওরের ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলে এজন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১ হাজার হার্ভেস্টের হাওরে ধান কাটার কাজ করছে। আশা করি এ বছর হাওরের ধান ঘরে উঠে যাবে।
গত বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ৪৫ হাজার টন ধান তলিয়ে যায়, যার বাজার মূল্য ছিল ২০০ কোটি টাকা। এ বছর ধান ঘরে তুলতে পারলে সেই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন কৃষকরা।
লিপসন আহমেদ/এসজে/এমএস