গরমের ওপর খাড়ার ঘাঁ লোডশেডিং
একদিকে প্রচণ্ড গরম অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। এ দুইয়ে উত্তরের বরেন্দ্র জনপদ নওগাঁয় জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষের সঙ্গে প্রাণিকূলের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। জমিন শীতল হতে প্রকৃতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রাণিকূল।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের তথ্যমতে, জেলায় গত কয়েক দিন সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
নওগাঁ বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) আওতায় উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ এবং পল্লী বিদ্যুতের ২টি সমিতি রয়েছে। যেখানে দিনে চাহিদা রয়েছে ১৩০-১৩৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১১৮ মেগাওয়াট এবং রাতের চাহিদা ১৪০-১৫০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১১৮-১২০ মেগাওয়াট। আর নেসকোর দিনে চাহিদা ৩৫ শতাংশ এবং রাতে ৪৫ শতাংশ। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা দিনে ৬৫ শতাংশ এবং রাতে ৫৫ শতাংশ।
সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি। রোজাদারের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই।
এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে বাসার মধ্যে যেন দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ কফিল উদ্দিন বলেন, বয়স হওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে বেশি সমস্যা। এত সূর্যের তাপ ও গরম আগে কখনো দেখিনি। বাতাস হচ্ছে সেটাও গরম। বিদ্যুৎ না থাকলে আরও সমস্যা। বৈশাখ পড়ে কয়েকদিন হলো, বৃষ্টির দেখা মিলছে না। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত জমিন ঠান্ডা হবে না।
বদলগাছী উপজেলার খলসি গ্রামের হোসেন আলী বলেন, গত কয়েকদিন থেকে বিদ্যুতের সমস্যা। শনিবার রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ গেছে পরদিন সকাল ৯টায় আসছে। রোববার ৪-৫ বার গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জমিতে ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি না পাওয়ায় ধানের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা এতো বেশি আগে কখনো দেখিনি।
মহাদেবপুর উপজেলার শালবাড়ি গ্রামের কৃষক সোয়াইব হোসেন বলেন, গত কয়েদিন থেকে দিনে কমপক্ষে ৭-৮ বার বিদ্যুৎ যায় আর আসে। ফসলি জমির মাটি সাদা হয়ে আছে। পানি সেচ হচ্ছে না। সেচ পাম্প মালিকদের বলেও লাভ নাই। কারণ বিদ্যুৎ ছাড়াতো আর সেচ হবে না।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হক বলেন, আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা ১২৩ মেগাওয়াট। সেখানে আমরা পেতাম ৯০ মেগাওয়াট। আবহাওয়ার কারণে গত কয়েকদিন থেকে মোটামুটি সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে কয়েকটি মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিতরণ হচ্ছে ৭২ মেগাওয়াট। যা ৩৫-৪০ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিং আছে। এটা জাতীয় গ্রীড থেকে সমস্যা। চাহিদা বেশি হলেও উৎপাদন কম। দিনে চাহিদা রয়েছে ৮৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৫৪ মেগাওয়াট। রাতে চাহিদা ৯১ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৫৪ মেগাওয়াট। যেখানে ঘাটতি রয়েছে ৩৭ মেগাওয়াট।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) উত্তর স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, লোডশেডিং আছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এফএ/জেআইএম