নওগাঁয় প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি
নওগাঁয় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে ঈদবাজার। প্রচণ্ড গরমেও পছন্দের পোশাক কিনতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবি শহরে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হচ্ছে। সবমিলিয়ে জেলায় দিনে প্রায় ৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। তবে দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।
শহরের আনন্দ বাজার, গীতাঞ্জলি শপিং কমপ্লেক্স, দেওয়ান বাজার, ইসলাম মার্কেট ও কাপড়পট্টিতে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। ক্রেতারা তাদের সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে ঘুরছেন বিভিন্ন দোকানে। দরদাম করে কিনছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ পোশাকসহ সবধরনের পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি।
এবারের ঈদে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ভারতীয় সিরিয়ালের ‘নাইরা কাট’ ড্রেস। গাউন মডেলের এ জামার ওপর ও নিচের দিকে বেশি কারুকাজ। ছোটদের এ পোশাক ৩-৫ হাজার টাকা এবং বড়দের পোশাকের দাম ৫-৭ হাজার টাকা। এছাড়া থ্রি-পিস ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় গজপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে জামদানি শাড়ি ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিল্ক ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু শহরের গার্মেন্টস দোকানে এক কোটি টাকার মতো বেচাকেনা হচ্ছে। তবে জুতা ও কসমেটিকস সামগ্রীসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে আরও প্রায় এক কোটি টাকার মতো বেচাকেনা হয়।
জেলার আরও ১০টি উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। সে হিসাবে জেলায় প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে।
শপিংমলগুলোতে পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ভিড় করছেন ফুটপাতের দোকানেও। এসব দোকানে বিশেষ করে ছোটদের পোশাক বেশি পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার প্রথম থেকে বেচাকেনা তেমন একটা হয়নি। তবে ১০ রোজার পর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। পোশাকের দাম বাড়ায় ক্রেতারাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বিক্রি করতে বাড়তি কথাও বলতে হচ্ছে।
কৃষিপ্রধান এ জেলার মানুষের মূল আয়ের উৎস উৎপাদিত শষ্য। ইরিবোরো ধান কাটামাড়াই না হওয়ায় বেচাকেনার পরিমাণ কম। তারপরও বেচাকেনা নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
শপিংয়ে আসা তরুণী ফাল্গুনি বলেন, ঈদের বাজারে প্রতিবারই একটা ট্রেন্ড থাকে। যা ভারতীয় কিছু সিরিয়ালের পোশাকের অনুকরণে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার এসেছে ‘নায়রা কাট’। সাধারণ কামিজের মতো। সারারা টাইপের যে কামিজ রয়েছে একটু কারুকাজ করা। দামও মোটামুটি আছে।
সরকারি চাকরিজীবী সোহরাব হোসেন বলেন, বাচ্চাদের আগ্রহ বেশি। তাদের ইচ্ছা পূরণে বাজারে আসা। বাজারে পোশাকের দাম অনেকটা বেশি মনে হচ্ছে। চাকরিজীবীদের জন্যতো কষ্টকর। তারমধ্যে যারা সাধারণ মানুষ রয়েছে তাদের জন্য আরও বেশি কষ্টকর। তারপরও দরদাম করে কেনা যাচ্ছে।
শিশুদের পোশাকের দোকানী সবুজ মোল্লা বলেন, রোজার শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। রোজার শুরুতে বেচাকেনা নিয়ে একটু ভয় থাকলেও এখন সেটা নাই। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় আমাদের শঙ্কা কেটে গেছে।
মেঘলা কালেকশন এর স্বত্ত্বাধিকারী আলহজ্ব মুকুল আহমেদ বলেন, ঈদে দোকানে ছেলেদের জন্য মোটামুটি ভালো পোশাক রয়েছে। বাচ্চাদের প্যান্ট ৫০০-৬০০ টাকা, জামা ৪০০-৫০০ টাকা, টি-শার্ট ২০০-৫০০ টাকা এবং পাঞ্জাবি ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
নওগাঁ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ইরফান আলী বলেন, শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি গার্মেন্টসের দোকান আছে। শুরুতে বেচাকেনা কম ছিল। তবে ১০ রোজার পর থেকে বেচাকেনা বেড়েছে। যদিও সবধরনের পণ্যের দাম একটু বেশি। ক্রেতাদের কিনতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও কিনছেন। প্রতিদিন শহরে প্রায় এক কোটি টাকার মতো বেচাকেনা হচ্ছে। তবে সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
এফএ/এএসএম