বাতাস হলেই বুক কাঁপে হাওরের কৃষকের
ভাটির জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরের বোরো ধানের শীষে এখন ফুল বেরিয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখলেও ধান ঘরে তোলা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরের ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হলেও এরইমধ্যে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি। সেই সঙ্গে বাড়ছে নদীর পানি। ফলে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় পার করছেন কৃষকরা। উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে রয়েছেন শংকায়।
আরও পড়ুন- এবারও ফসল হারানোর ভয় হাওরের কৃষকদের
সুনামগঞ্জের করচার হাওরের কৃষক লুৎফুর মিয়া। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে ১০ একর জমিতে করেছেন বোরো আবাদ। সেই ধানে এখন ফুল বেরিয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করতে জমিতে কীটনাশক ও সার দিচ্ছেন।
কৃষক লুৎফুর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কষ্ট করে বোরো চাষ করলেও সেই ধান প্রতি বছর ঘরে তুলতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এরইমধ্যে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এখান থেকে ধান উৎপাদন হবে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন, যা থেকে ৯ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জাগো নিউজকে বলেন, সব কিছু টিক থাকলে ১২ এপ্রিল হাওরের কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হবে।
আরও পড়ুন- ৯ মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন চার গ্রামবাসী
চলতি বছর ৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকার চাল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৭৬টি পিআইসির মাধ্যমে ৭৪৫ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু সেই বাঁধের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষকরা। প্রতি বছর সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও বাঁধের কাজ শুধু নামমাত্র হয় বলে অভিযোগ কৃষকদের।
কৃষকরা জানান, এ বছর ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃষকরা হাওরের ধান ও বাঁধ দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন। ধান পানিতে তলিয়ে গেলে কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।
শনির হাওরের কৃষক মতিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঋণ করে বোরো চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হলেও সেই ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
আরও পড়ুন- শত বছরের ঐতিহ্য রডবিহীন পাগলা বড় জামে মসজিদ
করচার হাওরের কৃষক জব্বার মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। যখন বাতাস আর ঝড়ো হাওয়া দিয়ে বৃষ্টি শুরু হয় তখন বুক কাঁপে। আতঙ্কে থাকি। বাঁধ ভাঙলেই ফসল তলিয়ে যাবে। তাই বৃষ্টি শুরু হলে কৃষকরা বাঁধ পাহারা দিই।
দেখার হাওরের কৃষক জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এ ধান ঘরে তুলতে পারবো কি না জানি না। হাওরে বাঁধ ঠিক থাকলে ধান ঘরে তোলা সম্ভব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টিপাতে নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও বন্যার আশংকা নেই। বাঁধের কাজ ৯৮ শতাংশ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, হাওরের বাঁধের মাটির কাজ শেষ। সামান্য কিছু কাজ বাকি। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
এফএ/জেআইএম