জব্দ গরু ছিনিয়ে নিতে বিজিবির ওপর হামলা, দোকানকর্মী নিহত
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় জব্দ গরু ছিনিয়ে নিতে বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে চোরাকারবারিরা। এ সময় আত্মরক্ষায় বিজিবির ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আব্দুর জব্বার (৪০) নামে এক দোকানকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবির দাবি, একজন চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
শনিবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শামশুল আলম।
নিহত আব্দুর জব্বার কাউয়ারখোপ এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে। তিনি বাজারের রড-সিমেন্টের দোকানে মালামাল ওঠানামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামশুল আলম বলেন, ‘আমি অসুস্থ, তাই বাসা থেকে বের হইনি। তবে স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি শনিবার রাতে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা পাঁচ-ছয়টি গরু জব্দ করে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দ গরুগুলো পাচারের সঙ্গে জড়িতরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে চোরাকারবারিরা বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ঢিল ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। কৌতূহলবশত তা দেখছিলেন স্থানীয়রা। এ সময় দোকানকর্মী জব্বার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন আরও একাধিক। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’
মরদেহের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিজিবির সদস্যরা নিহতের মরদেহ নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নে নিয়ে গেছেন। খবর পেয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্ব একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখান থেকে তারা বিজিবি ব্যাটালিয়নে যায়।’
এদিকে, রক্তের দাগ মুছে ফেলতে গুলিতে মারা যাওয়ার স্থানে বালিচাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। গুলিতে দোকানকর্মী নিহত ও ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।
অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. রেজাউল করিমের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে কোনো ধরনের সাড়া না দেওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে গভীররাতে বিজিবি নাইক্ষ্যংছড়ি তাদের নিয়ন্ত্রিত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে বলা হয়েছে, দেশীয় প্রাণীজ সম্পদ শিল্প রক্ষার্থে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু চোরাচালানের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন ১১ বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৩০০ গরু বা এর সমমূল্য ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
এর ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল রাতে সীমান্তে চোরাই গরু জব্দ করার পর টহল দল হেঁটে ক্যাম্পে ফেরার সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কাউয়ারখোপ এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০-৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। টহলদলের সবাই কমবেশি আহত এবং তিন সদস্য গুরুতর আহত হন। এ সময় টহল দল সরকারি জানমাল এবং আত্ম-রক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হয়। এতে একজন চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি ক্রিচ ও একটি দা জব্দ করা হয়। আহত বিজিবি সদস্যদের চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত তিন সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে মামলাসহ আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/এমএস