ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লোকে ‘অশিক্ষিত’ বলায় লেখাপড়া শিখছেন ৫১ বছরের নারী

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০৭:৩৭ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২৩

বাবা-মা অনেক গরিব ছিলেন। পড়াশোনা করাতে পারেননি। অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সংসার জীবনে সন্তানদের লেখাপড়া করালাম। তবে গ্রামের অনেকেই আমাকে বলে ‘অশিক্ষিত’। একথা শুনে নিজের কাছেই কেমন লাগে। তখন ভাবলাম অশিক্ষিত আর থাকবো না। লেখাপড়া শিখে অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসবো। তাই আমি স্কুলে ভর্তি হই। আগে লিখতে পারতাম না, পড়তেও পারতাম না। এখন সবই পারি। অনেক ভালো লাগে আমার।

কথাগুলো বলছিলেন ৫১ বছর বয়সী হাসিনা খাতুন। তিনি ২০১৮ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন।

হাসিনা খাতুন ওই উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কাশেমের স্ত্রী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে যশোর এম এম কলেজে অনার্স পড়ছেন।

আরও পড়ুন: সুস্থ করার পর জেলে কামালকে ছেড়ে যাচ্ছে না বাজপাখিটি-

সরেজমিন হাসিনা খাতুনের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ শেষ করে স্কুলে আসার জন্য হাসিনা খাতুন তার ঘরের মধ্যে একটি বিছানাতে বসে বইখাতা ব্যাগে ভরছেন। একটু পর স্কুলব্যাগটি নিয়ে একাই হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পাশে স্কুলে গেলেন। স্কুলে প্রবেশ করে সোজা ঢুকে গেলেন ক্লাসরুমে। কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে তিনিও পড়ায় মনোযোগ দিলেন। ক্লাসরুমের শিক্ষিকাকেও দেখা যায় হাসিনাকে অন্য শিক্ষাথীদের মতো করে পড়াচ্ছেন।

jagonews24

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসিনা খাতুন এ বয়সে এসে স্কুলে পড়াশোনা করছে। এটা আমাদের খুব ভালো লাগে। তার বাড়িতে যত কাজই থাকুক সে স্কুলের সময় হলে ঠিক চলে যায় স্কুলে।’

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চৈতালি সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি তার খুব আগ্রহ রয়েছে। এজন্যই এতদূর আসতে পেরেছেন। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন। এমনকি প্রতিটি সাবজেক্টে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন।’

আরও পড়ুন: রিকশা চালিয়ে পড়ার খরচ জোগাচ্ছেন ডলার

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তহিদুল ইসলাম ও আফিয়া আফরিন বলে, ‘আমাদের সঙ্গে এক দাদি পড়াশোনা করে। আমরা সবাই তার সঙ্গে খেলি। তিনিও আমাদের অনেক স্নেহ করেন। আমরা তাকে সম্মান করে চলি।’

কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসিনা খাতুন কোরআন পড়তে পারেন। কিন্তু বাংলায় লেখাপড়া জানেন না। আমার কাছে এসে একদিন বললেন, আমি আপনার স্কুলে পড়তে চাই। তার একথা শুনে আমি স্কুলের সবার সঙ্গে কথা বলি। সবাই সাড়া দিলে তখন তাকে ভর্তি করিয়ে নিই।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘প্রাথমিকে ভর্তির একটি নীতিমালা আছে। আসলে তার আগ্রহ দেখে নীতিমালার বিষয়টি নিয়ে আর ভাবা হয়নি। আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই তাকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি উপবৃত্তির সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বয়স্কদের ভর্তি করার আলাদা কোনো নিয়মনীতি নেই। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের ভর্তি করানো হয়। সারাদেশে তার মতো হাতেগোনা কয়েকজন থাকতে পারের।

এসআর/জিকেএস