ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ডিজেল-বিদ্যুৎ ছাড়াই চলে কৃষক হাদিস মিয়ার ওয়াটার পাম্প

জেলা প্রতিনিধি | কিশোরগঞ্জ | প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৩

কোনোরকম তেল কিংবা বিদ্যুৎ ছাড়াই মাটির ওপর কিংবা নিচ থেকে পানি তুলতে সক্ষম পাম্পটি চলবে একটানা ৮ ঘণ্টা। এমনই এক ওয়াটার পাম্প আবিষ্কার করেছেন কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের কৃষক হাদিছ মিয়া। নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার পাম্প।

জমিতে সেচ দিতে কৃষকের দুঃখ-দুর্দশার কথা মাথায় রেখে কৃষক হাদিছ মিয়া আবিষ্কার করেছেন এই অটো ওয়াটার পাম্প। কৃষকের এমন উদ্ভাবন তাক লাগিয়েছে সাধারণ মানুষকে।

বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার পাম্পের উদ্ভাবক কৃষক হাদিছ মিয়া উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের পূর্ব পংপাচিহা গ্রামের জালদোয়া পাড়ারা ইদ্রিস মুনসীর ছেলে। তিনি এক সময় বিআরটিসিতে চাকরি করতেন। বর্তমানে গ্রামে কৃষি কাজ করেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার পাম্প দিয়ে কোনোরকম খরচ ছাড়াই সেচ দেওয়া সম্ভব। তেল ও বিদ্যুৎ ছাড়াই মোটর চালিয়ে কিভাবে কৃষকের জমিতে সহজে সেচের ব্যবস্থা করা যায় সেই চিন্তা থেকে কৃষক হাদিছ মিয়া এই পাম্প উদ্ভাবন করেন।

হাদিছ মিয়া এক সময় বিআরটিসিতে চাকরি করতেন। সেখানে ইঞ্জিনে কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ ওয়াটার পাম্প উদ্ভাবন করেছেন তিনি। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন একই এলাকার আরও দুই কৃষক। বর্তমানে তাদের এই উদ্ভাবন বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে।

ডিজেল-বিদ্যুৎ ছাড়াই চলে কৃষক হাদিস মিয়ার ওয়াটার পাম্প

মূলত সেল্ফ রিচার্জেবলের মধ্য দিয়ে ঘুর্ণায়মান কমপ্রেসারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেখান থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ দিয়েই চলে ওয়াটার পাম্প। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে উৎপন্ন এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে নিজ বাসাবাড়িতেও। বিদ্যুৎ ঘাটতি ও ডিজেলের উচ্চ মূল্যের কথা চিন্তা করেই এই উদ্ভাবন। বর্তমানে এই পাম্পের মাধ্যমে ৪০০ কাঠা জমিতে পানি দেওয়া হচ্ছে।

কৃষক হাদিছ মিয়া জানান, দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা চিন্তা করে গ্রামের জুবায়ের ও সালাম বয়াতিকে সঙ্গে নিয়ে এই ওয়াটার পাম্প উদ্ভাবন করি। এ পাম্পটি নদী ও পাতালের ১০০ ফিট নিচ থেকে থেকে পানি তুলতে পারে। এছাড়া পাম্পটি একটানা ৮ ঘণ্টা চলবে এবং ১ ঘণ্টা বিরতিতে আবার ৮ ঘণ্টা চলবে। এ পাম্পটি তৈরি করতে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ পাম্পে ৬০ ভোল্টের একটি ব্যাটারি, একটি সেল্ফ, একটি ডিসি মোটর, একটি কন্ট্রোলার ও ৫ কেভি টু-টোয়েন্টি জেনারেটর রয়েছে। এই যন্ত্রগুলো একসঙ্গে কাজ করে ৫০০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। এই পাম্প দিয়ে দেশের যেকোনো জায়গায় পাতাল থেকে পানি তোলা যাবে। এই পাম্পটি বাজারজাতকরণে সরকারের সহযোগিতা চাই আমি।

ডিজেল-বিদ্যুৎ ছাড়াই চলে কৃষক হাদিস মিয়ার ওয়াটার পাম্প

গ্রামের কৃষক হলুদ মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের হাদিছ ভাই যে অটো ওয়াটার পাম্প তৈরি করেছেন এটা দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসছে। তেল ও বিদ্যুৎ ছাড়া নদী ও পাতাল থেকে অটো পানি তুলছেন। এই পাম্পের পানি আমরা জমিতে ব্যবহার করছি। প্রধানমন্ত্রী যদি একটু নজর দিতেন তাহলে আমাদের মতো কৃষকের অনেক উপকার হতো।

হাদিস মিয়ার অটো পাম্প থেকে সেচ নেওয়া কৃষক মো. বকুল জানান, হাদিছ মিয়ার এই উদ্ভাবন আশা জাগিয়েছে আমাদের মতো সাধারণ কৃষকের মাঝে। কৃষি কাজে খরচ কমিয়ে আনা ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধে হাদিছ মিয়ার এই উদ্ভাবন কাজে লাগানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

কিশোরগঞ্জের আইয়ুব-হেনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাইয়ুম রনি বলেন, হাদিছ মিয়ার তৈরি এ অটো ওয়াটার পাম্প দিয়ে সহজেই যেমন কৃষকের জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করা যাবে তেমনি এই পাম্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাসাবাড়িতেও কাজে লাগনো যাবে। এমন ব্যক্তিরা সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ভালো কিছু করবে।

এফএ/জেআইএম