ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

আরাফাত রায়হান সাকিব | প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৩

আরও এক মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সড়কপথ চালুর ১০ মাসের মাথায় এবার প্রস্তুত রেলপথ। ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন প্রকৌশলীরা।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলবে ট্রেন। প্রথমবারের ট্রেন পাড়ি দেবে পুরো পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন প্রকৌশলীরা।

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

প্রকৌশলীরা জানান, বুধবার (২৯ মার্চ) রেলপথের সবশেষ ৭ মিটার অংশের ঢালাই দেওয়ার মাধ্যমে কাজ সমাপ্ত হয়। শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে প্রকৌশলীদের পরীক্ষায় পুরো সেতুতে ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বিশ্বমানের করে প্রস্তুত করা হয়েছে পদ্মা সেতুর রেলপথ। শত বছরেরও বেশি সময় টেকসই থাকবে।

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ায় পুরো সেতুতে আজ পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকৌশলীরা। দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক এ ট্রেন চলাচলের উদ্ধোধন করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। পরে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪১.৫ কিলোমমিটার অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে। রেলমন্ত্রী উপস্থিত থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেনে পাড়ি দেবেন পুরো পদ্মা সেতু। দুপুরে মাওয়া প্রান্তে প্রেস ব্রিফিং করবেন। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে প্রস্তুত করা হয়েছে ব্রিফিং মঞ্চ।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার জন্য রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আনা হয়েছে ‘ট্রায়াল ট্রেন’। ট্রেনটিতে কোচ রয়েছে সাতটি। ট্রেনটির চালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে। সেই ট্রেনের চালক আমি। এমন একটি স্মরণীয় ঘটনার ট্রেনের প্রথম চালক হতে পেরে আমি আনন্দিত। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’

চলতি বছরই ঢাকা-ভাঙ্গায় চলবে ট্রেন

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার অংশ তিন ভাগে ভাগ করে এগিয়ে চলছে কাজ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৮ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। আর সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবজাল হোসেন।

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও ঢাকা-মাওয়া ও মাওয়া-ভাঙ্গা এ দুই অংশের মোট ৮২ কিলোমিটারের কাজ চলতি বছরই শেষ হবে। প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

পদ্মাপাড়ে উচ্ছ্বাস

পদ্মা সেতুতে রেলপথের কাজ শেষ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত দুই পাড়ের মানুষ। মাওয়ার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ‘দেখতে দেখতে সড়কের পর রেললাইনের কাজ শেষ হলো। এখন মানুষ আরও ভালোভাবে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পারবে।’

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

ইলিয়াস হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে গাড়ি চলবো, এটা ভাবতেও পারি নাই। এখন নাকি ট্রেনও চলবো। খুশি লাগতাছে খুব।’

প্রকৌশলী সূত্র বলছে, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত রেলসংযোগ প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। গতবছরের ২০ আগস্ট সেতুতে রেললাইন স্থাপনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে বিভিন্ন জটিলতায় পুরোদমে কাজ শুরু হয় নভেম্বরে। পুরোদমে কাজ শুরুর পঞ্চম মাসে এসে কাজ শেষ হলো।

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ

প্রকৌশলীরা জানান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দুই পাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১০ হাজার ৭৯০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকি সবগুলো কংক্রিটের তৈরি। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এ রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। নতুন রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।

এসআর/জেআইএম