নামাজ শেষে অটোরিকশা না পেয়ে কাঁদছেন এক পা হারানো রশিদ
অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন দুর্ঘটনায় পা হারানো আব্দুর রশিদ। তার উপার্জনেই চলে চার সদস্যের সংসার খরচ। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মসজিদের সামনে অটোরিকশাটি রেখে আসরের নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে এসে দেখেন, অটোরিকশা নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও অটোরিকশাটি পাননি। জীবিকার অবলম্বনটি হারিয়ে কেঁদে ফেলেন আব্দুর রশিদ।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তার পুকুর পাড় জামে মসজিদের সামনে এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ (২৪) সুনামগঞ্জের ছাতক থানার পুরান নোয়াকোট গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে। তিনমাস আগে পরিবার নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর শহরে আসেন। সেখানে তাজুর বাড়িতে ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শৈশবে একদিন নৌকায় করে নানাবাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় নৌকার ইঞ্জিনে বাম পা হারান। পরে বাড়ির পাশে একটি চায়ের দোকান দেন। পাথর ভাঙার শ্রমিকরা তার কাস্টমার ছিলেন। একসময় পাথর ভাঙা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় তাকে। পরে এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে এসে একটি বাসা ভাড়া নেন। ৯০ হাজার টাকায় একটি অটোরিকশা কেনেন।
অটোরিকশা কেনার কয়েকমাসের মধ্যে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন আব্দুর রশিদ। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে সাপ্তাহিক ১ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তিতে এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশার ব্যাটারি কিনে তা সচল করেন।
আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি সারাদিন অটোরিকশা চালালেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। অটোরিকশা চালাতে চালাতে যখন নামাজের সময় হয় তখন আশপাশের মসজিদে নামাজ আদায় করি। বৃহস্পতিবারও মসজিদের সামনে অটোরিকশা রেখে নামাজে গিয়েছিলাম। চার রাকাত নামাজ শেষ করে এসে দেখি অটোরিকশাটি নেই। এ রিকশাটিই ছিল আমার আয়ের প্রধান উৎস।’
ওই সময় একই মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন বুলবুল হাসান। তিনি বলেন, আব্দুর রশিদ প্রায়ই এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। আমরা একসঙ্গে নামাজ আদায় করি। নামাজে এসে যে অটোরিকশা হারাতে হবে এটা মানা খুব কষ্টের। বিত্তবানদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।
আমিনুল ইসলাম/এসআর