ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নওগাঁ

খরচ বেড়ে দ্বিগুণ, ছাত্রাবাস ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা

আব্বাস আলী | নওগাঁ | প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২৩

ঊর্ধ্বগতির বাজারে নওগাঁ শহরে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের। গত দুই বছরের ব্যবধানে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এখন ছাত্রাবাস ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।

এদিকে নওগাঁ সরকারি কলেজে নেই ছাত্র হোস্টেল। তাই বাড়ি থেকে কলেজে আসতে এবং শহরে থাকতে দ্রুত হোস্টেল নির্মাণসহ বাস সার্ভিস চালুর দাবি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ডিগ্রী, অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা হয়। বর্তমানে এ কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় ১৬ হাজার। ১৪টি বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। কলেজের ছাত্রীদের জন্য দুইটি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। যেখানে সিট সংখ্যা ১৯২টি। এরমধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৪০টি। তবে দুটি ছাত্র হোস্টেল থাকলেও দুই বছর আগে ভেঙে ফেলা হয় সেগুলো। যেখানে ছাত্র থাকতে পারতো ৯০ জন।

এ কলেজকে কেন্দ্র করে আশপাশে প্রায় ২৫০টি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস গড়ে উঠেছে। এ কলেজ ছাড়াও বিএমসি মহিলা কলেজ, আস্তানমোল্লা ডিগ্রী কলেজ ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের আরও প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব ছাত্রাবাসে প্রায় ১৮ হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকতে পারে। বাকি শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে।

নওগাঁ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন অনিক। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অনিক শহরের একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গ্রামের বাড়ি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে জেলার মহাদেবপুর উপজেলায়। ৭ বছর যাবত ছাত্রাবাসেই থাকেন তিনি। গত দুই বছরের ব্যবধানে ছাত্রাবাসে সিট, মিলরেট, বিদ্যুৎ ও আনুসাঙ্গিক সব খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা খরচ হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  ধারদেনায় চলছে সংসার, খাদ্যতালিকা থেকে বাদ মাছ-মাংস

শিক্ষার্থী রুহুল আমিন অনিক বলেন, গত দুই বছর আগেও ছাত্রাবাসে খরচ হতো ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। ১৫ দিন পর গরুর মাংস ও সপ্তাহে দুইদিন মুরগি এবং ডিম ও মাছ প্রায় খাওয়া হতো। এখন সবকিছুর বাজার ঊর্ধ্বমূখী। ম্যাসের সিট ১ হাজার টাকা, মিলে জমা দিতে হয় ২৫০০ টাকা। খালা, পত্রিকা ও বিদ্যুৎ বিলসহ আনুসাঙ্গিকসহ ৫০০ টাকা। খাবারের মান কমে গেছে কিন্তু খরচটা বেড়ে গেছে। মিলরেট দ্বিগুণ হলেও গত দুই মাস ধরে খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মুরগি ও গরুর মাংস। সবজি, মাছ, ডাল ও ডিম খেয়ে পার করতে হচ্ছে দিন।

শুধু রুহুল আমিন অনিক নয়। এ অবস্থা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীদের জন্য এখন ছাত্রাবাসে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় অনেকে ছাত্রাবাস ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অনেক ছাত্রাবাসের সিট ফাঁকা হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে অনেকে কলেজ করছে। ক্লাস শেষে আবার ফিরে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের খরচ কমাতে কলেজে আধুনিক মানের হোস্টেল নির্মাণের পাশাপাশি নিজস্ব বাস সার্ভিস চালুর দাবি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল সিফাত বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করছি। আগের তুলনায় খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু বাড়ি থেকে যে খরচ নিয়ে শহরের থাকছি বাবার আয় তো আর বাড়েনি। আগে যা আয় ছিল সেটাই রয়েছে। বলতে গেলে বাবার আয় কমেছে। কারণ যা আয় করছে তা দিয়ে আগের মতো চলছে না। এখন বাড়ি থেকে টাকা নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মধ্যবিত্তদের জন্য এখন অনেকটাই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে।

আরও পড়ুন:  মুরগি ছেড়ে গিলা-কলিজায় নজর নিম্ন আয়ের মানুষের

একই বিভাগের শিক্ষার্থী জনি হোসেন বলেন, আগে ২ হাজার টাকার মধ্যে ছাত্রাবাসে থাকা খাওয়া হয়ে যেত। কিন্তু এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া প্রাইভেট পড়তে হয় যা অতিরিক্ত একটা খরচ। আগে মিলরেট ছিল ১২-১৪ টাকা। আর এখন ২২-২৩ টাকা পড়ে।

ম্যাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ বলেন, নওগাঁ শহরে নিবন্ধিত ১৮৫টি এবং অনিবন্ধিত ৬৫টি ম্যাস রয়েছে। প্রায় ২০-২১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বিভিন্ন যানবাহন ও সাইকেল নিয়ে কলেজ করে। বাকিরা বিভিন্ন ম্যাসে থাকে।

নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নাজমুল হাসান বলেন, বর্তমানে ছাত্রীদের দুইটি হোস্টেল থাকলেও সেখানে বেশ কিছু আসন খালি আছে। এছাড়া ছাত্রদের জন্য দুইটি পুরাতন হোস্টেল ছিল তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবং হোস্টেলে অনেক নিয়মকানুন থাকায় শিক্ষার্থীরা আর হোস্টেলে থাকতে চায় না। তারা বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করে আবার চলে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:   ফেনীতে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলো পৌরসভা

তিনি বলেন, ব্যক্তিমালিকানার অনেক হোস্টেল থাকায় শিক্ষার্থীরা সেখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে, তাই শিক্ষার্থীরাও আর হোস্টেলে থাকতে চায় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা যেহেতু ভালো, কলেজের বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে চারটি বাস থাকলে সুবিধা হয়। আর এটি নিয়ে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। যেন শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করে ফিরে যেতে পারে।

এফএ/এএসএম