ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বোরোর জমি ফেটে চৌচির, ধান বাঁচাতে কৃষকের আহাজারি

আব্দুল্লাহ আল-মামুন | ফেনী | প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৩

বোরো মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও তীব্র গরমে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে ফেনীর সোনাগাজীতে। একইসঙ্গে সময়মতো পানি দিতে না পারায় রোদে মাঠে থাকা বোরো ধান জ্বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে ধান উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাজার হাজার কৃষক।

কৃষকরা বলছেন, কৃষি বিভাগের আশ্বাসে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন তারা। কিন্তু খালে পানি না থাকায় ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্পও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাজুড়ে ৫০টিরও বেশি খাল রয়েছে। মুহুরী নদীতে মিঠাপানি, বড় ও ছোট ফেনী নদীতে নোনা পানি থাকলেও রহস্যজনক কারণে খালগুলোতে পানি যাচ্ছে না। নদীগুলোর মোহনায় খালে পানি ধরে রাখার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি রেগুলেটর (গতি নিয়ন্ত্রক)। গত কয়েক বছর যাবৎ শত শত কোটি টাকার সরকারি খরচে খালগুলো সংস্কারও করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও খালগুলোতে পানি নেই।

পানি পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা। এরই মধ্যে কৃষকদের পক্ষ থেকে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সব দপ্তরের কর্মকর্তারা খালে পানি সরবরাহ করার আশ্বাস দিলেও খালগুলোতে এখনও পানি সরবরাহ করতে পারেননি।

অধিকাংশ এলাকায় গ্রামের পুকুরগুলো থেকে পানি কিনে জমিতে সেচ দিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু পুকুরের পানিও ফুরিয়ে যাওয়ায় স্বপ্নের ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার সরকারি হিসাবে উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) ১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও হাইব্রিড চাষ হয়েছে ৩০০ হেক্টর। বেসরকারি হিসাব মতে সোনাগাজীতে বোরো আবাদ হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর। চাষকৃত ধানের মধ্যে রয়েছে বিআর-১৬, ব্রিধান-২৮, ২৯, ৬৭, ৬৮,৭৪, ৮৮, ৮৯, ৯২, বিনা-১০, ২৪, হাইব্রিড ব্র্যাক-১১, রূপালী, দোয়েল, সম্পদ, হীরা-২, ময়না ও টিয়া।

এ উপজেলাতেই রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানীরা ধানের নতুন নতুন জাতও উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন। কিন্তু উপকূলীয় এ উপজেলায় কৃষকদের নীরব কান্না যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, বৃষ্টির পানির অভাবে বোরো ধানের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। যেসব ক্ষেতে পানি নেই, ওইসব জমির মাটি শক্ত হয়ে আছে। অনেক জায়গায় ধানের গাছ রোদে পুড়ে লাল বর্ণ হয়ে গেছে। কৃষকরা বিকল্প উপায়ে পানি দিয়েও মাঠের ফসল রক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তীব্র রোদ ও ক্ষরা থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকরা বৃষ্টির প্রহর গুণছেন। জীবন-জীবিকাসহ ফসল রক্ষায় অনেকে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনাও করছেন।

পৌরসভা এলাকার চরগণেশ গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার ৭০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছি। পানির অভাবে ধানের গাছগুলো রোদে পুড়ে যাচ্ছে। পানি না দিলে আমাদেরকে জমিতেই গুলি করে মেরে ফেলা হোক।

তিনি জানান, তিনি বিআর-২৯ ধানের চারা লাগিয়েছেন। খালে পানি না থাকায় দূরের একটি পুকুর থেকে পানি কিনে এনে মাঠে দিয়েছেন। কিন্তু সেই পানিও শুকিয়ে গেছে।

উপজেলার চর সাহাভিকারী এলাকার কৃষক মাইন উদ্দিন বলেন, বড় আশা করে তিন একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। দুই একর নিজের আর বাকি এক একর বর্গাচাষিকে দিয়ে চাষ করিয়েছি। পানি সংকটে আমি ও আমার বর্গাচাষির মাথায় হাত পড়েছে।

চর চান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনী পাড়ার কৃষক প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, তিনিসহ সহযোগী কৃষকরা ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং স্ত্রী-কন্যার সোনা বন্ধক রেখে জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধানের সঙ্গে কৃষকের মারা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। ধানক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, এ অঞ্চলে ধানচাষের প্রধান উৎস হলো বৃষ্টির পানি। দ্রুত সময়ের মধ্যে খালে পানি সরবরাহ করতে না পারলে ধানের চরম ক্ষতি হবে। এতে কৃষকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হবে। এর ফলে আমাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাবে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। পানি সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আগামীতে বোরোসহ অন্য ফসল চাষেও আগ্রহ হারাবেন।

সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, কৃষকদের পানি সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। নিয়মিত পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি।

এফএ/এএসএম