বাঁধের নামে কাটা পড়লো টাঙ্গুয়ার হাওরের ৫০ হিজল গাছ
দেশের বিখ্যাত জলাভূমি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের পলিয়ার বিলের হিজল-করচ বাগ সবার কাছে পরিচিত। হাওরপাড়ের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর ও মন্দিয়াতা গ্রামের নিকটবর্তী এই হিজলবাগটি পর্যটকদের ছায়া দেয়। বর্ষায় মাছের অভয়াশ্রম হয় এখানে, হেমন্তে পাখির আবাসস্থল থাকে এটি। কিন্তু আড়াই ফুট প্রস্থ ও দেড়ফুট উচ্চতার মাত্র ৫০০ ফুট বাঁধের কাজ করতে ৫০টিরও বেশি হিজল-করচ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ডাল-পালা কেটে ক্ষতি করা হয়েছে আরও কমপক্ষে ৫০টি গাছের।
বুধবার (৮ মার্চ) বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তাহিরপুর উপজেলাসহ সুনামগঞ্জ জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যান। সেখানে বৃক্ষ নিধনকারী কাউকে না পেলেও এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোম ও মঙ্গলবার ক্ষেতের আইলের মতো ছোট মাটির বাঁধ করতে এস্কেভেটর ঢোকায় কিছু দুর্বৃত্ত। এ সময় এস্কেভেটরের পথ করতে ৫০ টিরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়। ডাল কাটা হয় আরও কমপক্ষে ৫০টি গাছের। পরে হাওরপাড়ের স্থানীয়রাই এদের রুখে দেন।
হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, ছোট একটি বাঁধ করতে এস্কেভেটর ঢুকিয়ে সর্বনাশ করা হচ্ছে জনপ্রিয় টাঙ্গুয়ার হাওরের। এ যেন মশা মারতে কামান চালানো হচ্ছে।
হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, ছোট এই বাঁধ নির্মাণে কিছু সংখ্যক শ্রমিক লাগালেই নির্মাণ করা যেত। হিজল গাছ কাটার প্রয়োজন পড়তো না। এরা হাওরের সর্বনাশ করেছে।
মন্দিয়াতা গ্রামের বাসিন্দা সানজু মিয়া বলেন, কখনোই টাঙ্গুয়ার হাওরের এ স্থানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়া হয় না। টাঙ্গুয়ার হাওরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হিজলবাগ এটি। মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এ বাগের অর্ধশতাধিক হিজলগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরও অর্ধ শতাধিক গাছের ক্ষতি করা হয়েছে। বাঁধের নামে অন্য ধান্দা করছিল এরা। যারা এটি করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
হাওরপারের ৪০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির জানান, হিজল গাছ কেটে বাঁধ করার কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়। বাঁধের নামে যারা হাওরের গাছ কেটেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
টাঙ্গুয়ার হাওরে হিজল গাছ কেটে বাঁধ দেওয়ায় জড়িত তাহিরপুর উপজেলার রতনপুর (তেরঘর) গ্রামের গোলাপ নুর গাছ কাটার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, এরালিয়াকোনা হাওরের বোরো ধান রক্ষার জন্য আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ মিলে ছোট এই বাঁধটি দিয়েছি। তবে আমরা হাওরের কোনো গাছ কাটিনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বললেন, বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পুলিশসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে পাঠানো হয়েছিল। কাউকে পাওয়া যায়নি। পেলে গ্রেফতার করা হতো। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে এগুলো ৩০ বছর আগে লাগানো। গাছ কাটার জন্য মামলা দায়ের করা হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে যারা গাছ কেটেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে ইজারাপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে হাওরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন।
এফএ/এএসএম