ডাকাত আতঙ্ক নিয়ে উপকূলে ফিরছেন জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যাওয়া এফবি ভাই ভাই নামে একটি ট্রলারে গত শনিবার ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ডাকাতির আতঙ্ক নিয়ে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরেছে শতাধিক ট্রলার। এখনো যারা সমুদ্রে মাছ শিকার করছেন তারাও আছেন আতঙ্কে।
জেলে নেতারা বলছেন, ডাকাতির ঘটনা ঘটলে প্রশাসন কয়েকদিন নড়েচড়ে বসে। তখন সাগর নিরাপদ থাকে। কিছুদিন গেলে আবার সাগর অনিরাপদ হয়ে ওঠে। তাই তারা সাগরের নিরাপত্তার স্থায়ী সমাধান চান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বরগুনার একটি ট্রলার ১৮ জেলে নিয়ে মাছ শিকারে যাওয়ার সময় ডাকাতরা হামলা করে। হামলা থেকে বাঁচার জন্য ট্রলার থেকে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যার মধ্য থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া চারজনের মধ্যে পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক জেলে মারা যান। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচ জেলে। ওই ঘটনার পর থেকেই বরগুনার জেলেদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রায় শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার মাছ শিকার না করে এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে ফিরেছে।
জেলে নেতারা বলছেন, একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতের হামলায় মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। গত বছরের জুলাই মাসের ২০ তারিখ বঙ্গোপসাগরে এফবি জুনায়েদ ও এফবি শাহ মহাসেন আউলিয়া-৩ ট্রলারে ডাকাতি হয়। তখন ওই ট্রলারে থাকা ৩০ জেলেকে পিটিয়ে আহত করে ডাকাতরা। এছাড়া ট্রলারে থাকা ইলিশ মাছ ও রসদ লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
এর আগে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করা অবস্থায় ২০টি ট্রলারে হামলা করে ডাকাতরা। ওই হামলায় এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এসব ডাকাতি থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরবনের কটকা এলাকায় ও বরগুনার পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান জেলে নেতারা।
এফবি মমতাজ ট্রলারের মাঝি মো. আজিজ বলেন, ডাকাতির ঘটনার পর থেকে ছেলেমেয়েরা আতঙ্কিত। বারবার ফোন করে বাড়িতে আসতে বলছে। আমার ট্রলারে থাকা অন্য জেলেদের পরিবার থেকেও বাড়ি ফিরতে বলছে। তাই আমরা মাছ শিকার না করেই ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরেছি। এরকম প্রায় শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার এরইমধ্যে ঘাটে ফিরেছে।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, যখন ডাকাতির ঘটনা ঘটে তখন প্রশাসনের লোকজন নড়েচড়ে বসে। তখন ডাকাত দমনে বিভিন্ন অভিযান চলে। এরপর সাগরে প্রশাসনের আর তেমন কোনো টহল থাকে না। তখন ডাকাতরা সুযোগ নিয়ে আবার ডাকাতি করে।
তিনি আরও বলেন, সাগরের এই ডাকাতি বন্ধ করতে হলে র্যাবের টহল ছাড়া সম্ভব না। কারণ, র্যাব সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত করেছে। তাই সুন্দরবন ও পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করলে সমুদ্র থেকে ডাকাত নির্মূল করা সম্ভব।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, সাগরে নির্বিঘ্নে জেলেরা যাতে মাছ শিকার করতে পারে তার সব ব্যবস্থা করা হবে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে আলোচনা করে বঙ্গোপসাগরে টহল বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।
এমআরআর/জেআইএম