ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
মারা গেলো ‘টুম্পা’, আর রইলো তিনটি
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অসুস্থ সিংহী ‘টুম্পা’ মারা গেছে। এর ফলে পার্কটিতে আর মাত্র তিনটি সিংহ জীবিত রইলো।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন এই সিংহী মারা যায় বলে জানিয়েছেন পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, গত প্রায় দুই মাস ধরে টুম্পাকে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে সিংহী টুম্পার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চকরিয়া ও সাফারি পার্কে কর্মরত ভেটেরিনারি অফিসারের তত্ত্বাবধানে মৃত সিংহীর ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের সিংহরাজ ‘সোহেল’র মৃত্যু
এদিকে, গত একবছরে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুর হার বেড়েছে। বার্ধক্যজনিত ও সাধারণ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত একবছরে মারা গেছে হাতি-সিংহসহ ছয় প্রাণী। নানা উন্নয়নের পরও সীমানা প্রাচীরের ২১টি পয়েন্ট এখনো অরক্ষিত। সেসব স্থান দিয়ে অনায়াসে পার্কে ঢুকছে বন্য হাতির পাল। এরা পার্কে গাছগাছালি ও স্থাপনা নষ্ট করছে। অরক্ষিত স্থান দিয়ে বের হওয়া হরিণ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পার্ক সূত্র মতে, গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চারটি সিংহ ও দুটি হাতি মারা যায় সাফারি পার্কে। তার মধ্যে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বার্ধক্য ও পিত্তথলিতে পাথর জমে মারা যায় ৮৬ বছর বয়সী ‘রঙ্গমালা’ নামে এক হাতি। একই বছর ২৮ নভেম্বর ৩২ বছর বয়সী হাতি ‘সৈকত বাহাদুর’ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যায় ২২ বছর বয়সী সিংহ ‘সোহেল’। গতবছরের ২২ এপ্রিল মারা যায় ১০ বছর আট মাস বয়সী সিংহী ‘নদী’। সঙ্গী সম্রাটের সঙ্গে পার্কে মিলনের সময় আহত হয়ে ‘ফিলাইনলিউকিমিয়া’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নদী। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মারা যায় ১৬ বছর বয়সী সিংহ ‘রাসেল’। এনাপ্লাজমা ও বিউবমিয়া স্পিসিসে আক্রান্ত হয়ে রাসেল মারা যায় বলে উল্লেখ করে চিকিৎসক টিম। একই রোগে আজ মারা গেছে সিংহ রাসেলের বোন ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‘টুম্পা’।
আরও পড়ুন: ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের হাতি ‘সৈকত বাহাদুরের’ মৃত্যু
সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৯০০ হেক্টর বিশিষ্ট সাফারি পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশে ২১টি পয়েন্ট অরক্ষিত। ওই স্থান দিয়ে পার্কের হরিণ নিকটস্থ জঙ্গলে বের হলে শিকারির খপ্পরে পড়তে পারে। কিছু হরিণ নিখোঁজ থাকতে পারে। পার্কে হরিণের সংখ্যা অনেক। গণনার ব্যবস্থা থাকলে কী পরিমাণ নিখোঁজ তা সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যেত।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১-৪৫ বছর বয়সী চারটি হাতি পার্কে রয়েছে। টুম্পা মারা যাওয়ার পর দুটি সিংহী ও একটি সিংহ আছে এখন। অন্য প্রজাতির প্রাণিগুলো সুস্থ-সবল রয়েছে। পশু পাখিগুলোকে নিয়মিত দেখভালসহ পর্যাপ্ত খাদ্য দেওয়া হচ্ছে।
সিংহ ও হাতি মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রাণী অসুস্থ হলে সুস্থ করে তুলতে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। যেগুলো মারা গেছে তাদের সুস্থ করতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছে মেডিকেল টিম। এরপরও বার্ধক্য এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ছয়টি প্রাণী মারা যায়। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও টুম্পাকে সারিয়ে তুলতে পারেনি চিকিৎসক টিম।
আরও পড়ুন: মারা গেলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অসুস্থ সিংহী
তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলামের দাবি, পার্কের যে অংশ দিয়ে বন্য হাতি প্রবেশ হয় তা পার্কের পূর্বপাশে লামা উপজেলা অংশে। দর্শনার্থী থাকে পার্কের পশ্চিমাংশে। এ পাশে বন্য হাতি আসার সুযোগ নেই। তাই দর্শনার্থীরা নিশ্চিন্তে পার্কের প্রকৃতি ও প্রাণী দর্শন করতে পারেন।
সায়ীদ আলমগীর/এমআরআর/জেআইএম