মাতৃভাষা হারাতে বসেছে ওরা
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বজুড়ে শ্রদ্ধাভরে পালন করা হয় দিনটি। অন্যদের মতোই দিবসটি পালনে কমতি থাকে না পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের। বাংলার প্রতি তাদের অগাধ শ্রদ্ধা থাকলেও নিজেরাই হারাতে বসেছে মাতৃভাষা। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় মায়ের ভাষা মুখে ব্যবহার করতে পারলেও লিখতে বা পড়তে পারছে না এ সম্প্রদায়ের শিশুরা।
উপজেলার তুলাতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী উচিমে রাখাইন। মেধাবী এ শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সমানতালে লিখতে ও পড়তে পারলেও লিখতে পারে না তার মায়ের ভাষা।
আক্ষেপ নিয়ে উচিমে রাখাইন জাগো নিউজকে বলে, আমরা মায়ের কাছে এ ভাষায় কথা বলা শিখেছি কিন্তু লিখতে পারি না। আমাদের যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাখাইন ভাষার শিক্ষা না দেওয়া তাহলে কিছুদিন পরে কথা বলাটাও কষ্ট হয়ে যাবে। রাখাইন ভাষায় বই ও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানায় সে।
উপজেলার বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো ঘুরে দেখা যায়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে রাখাইন ভাষা শিক্ষা দিচ্ছেন। সীমা বৌদ্ধ বিহারে রাখাইন শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন রাখাইন ধর্মগুরু উত্তম ভিক্ষু। এছাড়া প্রতিটি মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ধর্মগুরুরা শিশুদের নিজ ভাষা শিক্ষা দেন। তবে এতসব উদ্যোগও কাজে আসছে না রাখাইন ভাষা টিকিয়ে রাখার জন্য।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ উত্তম ভিক্ষু জাগো নিউজকে বলেন, একটি সময় আমাদের প্রতিটি পাড়া ও মন্দিরে ভাষা শিক্ষার জন্য মাস্টার রাখা হতো। কিন্তু এখন প্রতিটি পাড়া বলতে গেলে রাখাইন ভাষার শিক্ষকশূন্য। তবে আমি নিজে উদ্যোগে শিক্ষাক্রম চালাচ্ছি। তবে ছাত্রাবাস, স্কুল না থাকার কারণে নানান সমস্যার মধ্যে চাহিদামতো শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের ভাষাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি দরকার।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি মং লাচিং জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে সংখ্যালঘু হওয়ায় মায়ের ভাষাটা পর্যন্ত বিলুপ্তির পথে। আমাদের শিশুরা এ ভাষায় কথা বলতে পারলেও লিখতে পারে না। আমাদের ভাষাটাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আমরা আসলে মর্মাহত।’
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের শিশুদের শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠানো হয়। তবে রাখাইন সম্প্রদায়ের কোনো বই ও শিক্ষক না থাকায় শিশুরা এ ভাষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য প্রতি বছর রমজানে একমাস বন্ধ থাকার সময় আমরা নিজেরা শিশুদের রাখাইন ভাষা শিক্ষা দেই। তাতে শিশুরা কিছুই শিখতে পারে না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আমরা যথাযথ মর্যাদায় পালন করলেও আমাদের মাতৃভাষা আজ বিলুপ্তি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রাখাইন ভাষায় বই মুদ্রণ ও শিক্ষা প্রসারের বিষয়টি সরকারি পরিকল্পনায় রয়েছে। অচিরেই তা বাস্তবায়িত হবে।
এসআর/জেআইএম