১০ হাজার মানুষের সেবায় স্বাস্থ্যকর্মী একজন
ভোলার দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এত সংখ্যক মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে মাত্র দুটি। একজন সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) কর্মী সপ্তাহে ২-৩ দিন ভাগ করে দুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মেলে মাসে মাত্র এক থেকে দুদিন। এতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী।
১৯৮০ সালের দিকে মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয় মদনপুর ইউনিয়ন। এরপর ১৯৯৪ সালে আবার জেগে ওঠে। ২০০১ সালে আবাস গড়তে থাকেন ইউনিয়নের ঘরবাড়ি হারা মানুষ। বর্তমানে এ ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। তবে ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে মাত্র দুটি। চারটি স্বাস্থ্য সহকারীর পদ থাকলেও জনবল নেই। কেউ অসুখে আক্রান্ত হলে শুরু হয় ভোগান্তি।
আরও পড়ুন: ৫ টাকায় মেলে সব রোগের চিকিৎসা
তখন ট্রলার ভাড়া করে দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ভোলা সদর হাসপাতালে নিতে হয় রোগীদের। এতে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। যা চরে বসবাস করা গরিব মানুষের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। অনেক সময় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান প্রসূতি ও শিশু।
প্রায় দুই যুগ ধরে মদনপুর ইউনিয়নের বসবাস করছেন মনসুর আলম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইউনিয়নে কোনো হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই। খুবই কষ্টে আছি আমরা।’
আরেক বাসিন্দা মো. শামীম বলেন, তাদের ইউনিয়নে মাত্র দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। একজন সিএইচসিপি ক্লিনিক দুটি পরিচালনা করেন। তিনি সপ্তাহে ২-৩ দিন করে প্রতিটি ক্লিনিক খোলা রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ দেন। ঝড়-তুফান হলে মাসে এক দুদিন আসেন।
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রায় দেড়মাস আগে বিনা চিকিৎসায় মারা যান রেণু বেগমের স্বামী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘হাসপাতাল ও ভালো চিকিৎসক থাকলে স্বামীকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হতো না।’
জান্নাত বেগম নামের আরেক নারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুরা অসুস্থ হলে চরে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। তখন দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা ভোলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। এতে অনেক টাকা খরচ হয়।’
বিবি মাসুমা বেগম বলেন, অনেক সময় টাকা জোগাড়ে দেরি হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই প্রসূতি ও শিশুর মৃত্যু হয়। এ চরে কষ্টের শেষ নেই।
আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্ত ৮০ শতাংশ শিশুই চিকিৎসায় সুস্থ হয়
ইউনিয়নের মানুষের কথা চিন্তা করে একটি হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান আসমা বেগম। একই সঙ্গে ইউনিয়নের দুটি ক্লিনিকে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সব সময় খোলা রাখার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মদনপুর ইউনিয়নে খুব শিগগির আরও একজন সিএইচসিপি পদায়ন করা হবে। তখন মানুষ আরও বেশি সেবা পাবেন।
ওই ইউনিয়নে আপাতত হাসপাতাল স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবার মান বাড়লে মানুষ হাসপাতালের মতো সেবা পাবেন।
এসআর/এএইচ/এএসএম