পোড়াদহ মেলায় ৪০ কেজির গ্রাসকার্প, দাম ৮০ হাজার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ মেলায় ৪০ কেজি ওজনের একটি গ্রাসকার্প মাছ উঠেছে। মাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। তবে মহসিন নামের এক ক্রেতা ৪৮ হাজার টাকা দাম বলেছেন। ওই দামে মাছটি বিক্রি করেননি বিক্রেতা।
প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে একদিনের জন্য পোড়াদহ মেলা বসে। একদিনের মেলা হলেও এর রেশ থাকে বেশ কয়েকদিন। বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
পোড়াদহের মেলার মূল আকর্ষণ মাছ। মেলাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রকারের মাছ আমদানি হয়। পোড়াদহের এ মেলা বাঘাইড় মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার মেলায় ওঠেনি বাঘাইড়।
মাছ ছাড়াও মিষ্টি, খেলনা থেকে শুরু করে সাংসারিক প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি হয় পোড়াদহের মেলায়।
মাছ ব্যবসায়ী মোকাব্বর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। এজন্য বড় মাছের ক্রেতা কম। তবে বাঘাইড় থাকলে কার্পজাতীয় মাছ একটু কম দামে পেতেন ক্রেতারা। বড় আকারের বিগহেড, কাতলা, রুই মাছ এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মেলা ঘুরে এবার ৪০ কেজি ওজনের গ্রাসকার্প মাছ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, এটিই এবারের মেলার সবচেয়ে বড় মাছ।
মাছটি মেলায় এনেছেন বজলুর রশিদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাটোরের বিল থেকে আনা হয়েছে গ্রাসকার্প মাছটি। এর ওজন ৪০ কেজি। দাম চেয়েছি প্রতিকেজি দুই হাজার টাকা।’
অন্য মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় আইড় মাছ দুই হাজার টাকা, চিতল ও বোয়াল ১৫০০ টাকা করে দাম চাওয়া হচ্ছে। ছোট সাইজের সিলভার কার্প ৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০, বিগহেড ৮৫০-৪৫০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের এক বিজ্ঞপ্তিতে বাঘাইড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় বেচাকেনায় বিধিনিষেধ থাকায় এ মাছ আনছেন না ব্যবসায়ীরা।
তবে এক ব্যবসায়ী কয়েকটি বাঘাইড় এনেছিলেন মেলায়। পরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযানে মাছগুলো জব্দ করা হয়। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামান আল ইমরান।
স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে পোড়াদহের আশপাশের সব গ্রামে উৎসবের ধুম লেগে যায়। প্রত্যেক বাড়ির জামাইদের দাওয়াত করা হয়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে আপ্যায়ন করান স্থানীয়রা।
মেলায় ঘুরতে এসেছেন রেজাউল ইসলাম। তিনি বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। পোড়াদহের পাশে মহিষাবান গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি।
রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘১০ বছর হয়েছে আমার বিয়ে। প্রত্যেকবার মেলায় দাওয়াত পাই। যত কাজ থাকুক, আমাদের আসতে হয় মেলায়। মেলা উপলক্ষে আমরা মাছ-মাংস ও মিষ্টি কিনি। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই।’
জয়পুরহাট থেকে মেলায় বেড়াতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল রানা। এরআগে কখনো এত বড় মেলা দেখেননি তিনি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ চাকরিজীবী যুবক বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি পাশের সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এ মেলার কথা অনেক শুনেছি। এবারই প্রথম এলাম। তবে এখনো কিছু কিনিনি। ঘুরে দেখছি।’
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বাচ্চু সরকার নামের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘৩০ কেজি ওজনের কাতলা এনেছি। দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি চাচ্ছি। দাম মিলে গেলে বিক্রি করে দেবো।’
মেলায় রুই ৪০০-৫০০ টাকা, বোয়াল ১ হাজার ২০০ টাকা এবং আইড় মাছের দাম চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি। নদীর পাঙাশ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের এ মেলায় মাছের আকৃতির ছোট-বড় সাইজের প্রায় ২০ রকমের মিষ্টি বিক্রি হয়। কাতলা মাছের আকৃতির ১১ কেজি ওজনের মিষ্টি এবার সবার নজর কেড়েছে। প্রতিকেজি ৪০০ টাকা হিসেবে ওই মিষ্টির দাম চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া কুল (বরই) এবং কেশরসহ নানা স্বাদের ফলও উঠেছে মেলায়। এমনকী বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ছিল চোখেপড়ার মতো।
পোড়াদহ মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এবারের মেলায় প্রায় দুই হাজার দোকান বসেছে। এর মধ্যে মাছের দোকানই চার শতাধিক। এসব দোকানে কয়েক কোটি টাকার মাছ বেচাকেনার টার্গেট করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা সেভাবে জমেনি। এবার করোনার কোনো প্রভাব নেই। তাই মেলায় বিপুল লোকজনের সমাগম হবে।
এসআর/এএসএম