বাগাতিপাড়ায় আগুন আতঙ্কে মহল্লাবাসী

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একই রাতে এক মহল্লার ৫ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্ক ভর করেছে মহল্লাবাসীর মনে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে বাগাতিপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষণহাটী মহল্লায় এমন ঘটনা ঘটে।

মহল্লাবাসীর দাবি, শুধু ওই রাতেই নয়, গত কয়েক রাত ধরেই ওই এলাকায় বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মহল্লাবাসীর মধ্যে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের ধারণা পরিকল্পিতভাবে কেউ অথবা কোনো চক্র এই ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

মহল্লাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ওই মহল্লার শফিকুল ইসলামের ছেলে সবুজ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে তার বাড়ির উত্তরে আগুন দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। এরপর সবাই নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একই পাড়ার জাফরের ছেলে জহুরুলের শয়নকক্ষের খড়ের বেড়ায় আগুন দেখে জহুরুল চিৎকার দেন। পরে পাশের বাড়ি থেকে লোকজন বের হয়ে আগুন নেভান।

ওই একই সময়ে ওই বাড়ি থেকে ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে দেল বাহারের ছেলে আলম তার বাড়িতে, ১০০ থেকে ২০০ গজ দূরে রমজানের ছেলে সাজদারের বাড়ির পাশে শুকনো কাঠের খড়িতে (জ্বালানি) আগুন দেখে চিৎকার করেন। এছাড়াও ওই একই সময় দেল বাহারের মেজ ছেলে ফেরদৌসের বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পৃথক দুটি স্থানে বস্তায় লাগানো জ্বলন্ত আগুন বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে তারা সেই আগুন নিভিয়ে দেন।

এই ঘটনার কয়েক দিন আগে ২৮ জানুয়ারি শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে পল্লী চিকিৎসক সাগরের বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্থদের ধারণা, খড় ও শুকনো ডালপালায় আগুন জ্বালিয়ে মিটারের নিচে কে বা কারা এটি রেখে থাকতে পারে।

এছাড়াও গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে একই মহল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইউসুফ আলীর বড় ভাই ইদ্রিসের বাড়ির পূর্ব পাশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। একই রাতে ওই স্থান থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে মালঞ্চি-দয়ারামপুর রাস্তায় আতির দোকান সংলগ্ন এলাকায় ইট দিয়ে রাস্তায় বেরিকেড তৈরি করে রাস্তার মাঝখানে বস্তা ভর্তি ময়লা-আবর্জনায় লাগানো আগুন জ্বলতে দেখেন মালঞ্চি বাজারের মুদি দোকানি জাবের আলী। ওই সময় জাবের আলী ওই পথে তার বাড়ি বাটিকামারীর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তিনি তার মোবাইল ফোনে সেই আগুনের ভিডিও ধারণ করেন।

স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে ৫ বাড়িতে লাগা ওই আগুন মহল্লাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ গজ। বাড়িগুলো আলাদা আলাদা হওয়ায় এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ারও কোনো মাধ্যম নেই। তবে এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে কেউ বা কোনো চক্র ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইউসুফ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি কোনো দুষ্টচক্রের হতে পারে।

পৌরসভার মেয়র একেএম শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় স্থানীয়রা একজনকে আটক করলেও নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিয়েছেন। তবে পুনরায় এ ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য ওই এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার রাখা হবে।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ/জেআইএম