ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
এক বছরে তিন সিংহ ও দুই হাতির মৃত্যু
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বন্দি প্রাণীর মৃত্যুর হার বাড়ছে। বার্ধক্যজনিত ও সাধারণ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে মারা গেছে হাতি-সিংহসহ পাঁচটি প্রাণী। তবে পার্কের অসুস্থ প্রাণী নিয়ে মেডিকেল টিম নিরলস কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম।
এত উন্নয়নের পরও সীমানা প্রাচীরের ২১টি পয়েন্ট এখনও অরক্ষিত। সেসব স্থান দিয়ে অনায়াসে পার্কে ঢুকছে বন্যহাতির পাল। এরা পার্কে গাছপালঅ ও স্থাপনা নষ্ট করছে। অরক্ষিত এসব স্থান দিয়ে বের হওয়া হরিণ নিখোঁজ হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা নিপীড়নের কাহিনি শুনলেন বেলজিয়ামের রানি
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় এক বছরে তিনটি সিংহ ও দুটি হাতি মারা গেছে সাফারি পার্কে। এর মধ্যে ৮৬ বছর বয়সী ‘রংমালা’ নামক হাতিটি গত ৩০ ডিসেম্বর বার্ধক্য ও পিত্তথলিতে আড়াই কেজি ওজনের গলব্লাডার (পাথর) জমে মারা যায়। ‘সৈকত বাহাদুর’ নামক ৩২ বছর বয়সী হাতি মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর।
বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যায় ২২ বছর বয়সী সিংহ ‘সোহেল’। সঙ্গী সম্রাটের সঙ্গে মিলনের সময় আহত ১০ বছর ৮ মাস বয়সী সিংহী ‘নদী’ ‘ফিলাইনলিউকিমিয়া’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় গত বছরের ২২ এপ্রিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মারা যায় ১৬ বছর বয়সী সিংহ ‘রাসেল’। এই সিংহটি এনাপ্লাজমা ও বিউবমিয়া স্পিসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে জানিয়েছে প্রাণী চিকিৎসক টিম। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাসেলের বোন ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‘টুম্পা’।
সূত্রমতে, একই সময়ে পার্কে উন্মুক্ত বিচরণরত প্রায় ৪শ’ হরিণের মধ্যে ৩০-৪০টি হরিণ নিখোঁজ। এছাড়া অরক্ষিত সীমানা প্রাচীর দিয়ে বছরে কয়েকবার বন্যহাতি প্রবেশ করে নষ্ট করে গাছপালা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয় দর্শনার্থীদের।
আরও পড়ুন- সৈকতের শহরে রাতের বিনোদন কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলা
হরিণ নিখোঁজ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, প্রায় ৯শ’ হেক্টরবিশিষ্ট সাফারি পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের ২১টি পয়েন্ট এখনও অরক্ষিত। ওই স্থান দিয়ে পার্কের হরিণ নিকটস্থ জঙ্গলে বের হলে ওঁৎ পেতে থাকা শিকারির খপ্পরে পড়ে পার্কে ফিরে আসতে পারে না। তবে কয়টি হরিণ নিখোঁজ তা জানা নেই। পার্কে অসংখ্য হরিণ রয়েছে। গণনার ব্যবস্থা থাকলে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যেত।
তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, বর্তমানে ১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী চোরটি হাতি পার্কে রয়েছে। অসুস্থসহ তিনটি সিংহী ও একটি সিংহ আছে পার্কে। অন্য প্রজাতির প্রাণীগুলো রয়েছে সুস্থ-সবল। নিয়মিত দেখভালসহ পর্যাপ্ত খাদ্য দেওয়া হচ্ছে পশু-পাখিগুলোকে।
তিনটি সিংহ ও দুটি হাতির মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রাণী অসুস্থ হলে সুস্থ করে তুলতে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। যেগুলো মারা গেছে তাদের ব্যাপারেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছে মেডিকেল টিম। এরপরও বার্ধক্য এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি প্রাণী মারা যায়। সিংহী টুম্পাকে সারিয়ে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে চিকিৎসক টিম।
আরও পড়ুন- কক্সবাজারে সরিষা আবাদ বেড়েছে
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা বলেন, কক্সবাজারের দীর্ঘতম সৈকতের পর প্রকৃতিপ্রেমীদের পছন্দের স্থান বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এখানকার সুবিশাল বৃক্ষরাজি, সবুজ প্রকৃতি, নানান প্রাণী দেখে বিমোহিত হন তারা। পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরে, আনন্দে বেড়িয়ে আসা যায়। কিন্তু পার্কে যদি বন্যহাতি ঢোকা রদ করা না যায়, তাহলে আতঙ্ক তাড়া করে দর্শনার্থীদের।
এ বিষয়ে পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, যে অংশ দিয়ে বন্যহাতি প্রবেশ করে সেটা পার্কের পূর্ব পাশে লামা অংশে। দর্শনার্থী থাকে পার্কের পশ্চিমাংশে। এপাশে বন্যহাতি আসার কোনো সুযোগ নেই। তাই দর্শনার্থীদের আতঙ্কিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
এফএ/জিকেএস