সৈকতের শহরে রাতের বিনোদন কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলা
সমুদ্র জলের নীল ঢেউয়ের স্পর্শ লাগা স্থানে পিচঢালা দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এর পাশেই সবুজ বৃক্ষরাজি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ পাহাড়। প্রাকৃতিক এ দৃশ্য যেন নয়নাভিরাম-মোহনীয়। এর টানেই কক্সবাজারে ছুটে আসেন নানা বয়সী পর্যটক। দিনে প্রকৃতির এ দৃশ্য পর্যটকদের বিমোহিত করলেও সন্ধ্যার পর দেখা বা আনন্দের কিছু নেই- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অতীতে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বৌদ্ধপল্লিতে হামলা, বিপুল রোহিঙ্গা আশ্রয় সর্বশেষ করোনা দুর্যোগে একের পর এক সমস্যায় পরিকল্পিতভাবে এগোতে পারেনি কক্সবাজার। তাই রাতের বিনোদনে কোনো স্থায়ী আয়োজন এখনো হয়ে ওঠেনি।
কিন্তু গত মাস দুয়েক ধরে চলা কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলা কক্সবাজারের স্থানীয় ভ্রমণপিয়াসী ও আগত পর্যটকদের রাতের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝাউবাগান ঘেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে চলমান শিল্প ও বাণিজ্যমেলায় রাত ১২টা পর্যন্ত কেনাকাটাসহ নানাভাবে বিনোদিত হচ্ছেন আগত মানুষ।
আরও পড়ুন- শীতের বিদায়লগ্নে কক্সবাজারে বেড়েছে পর্যটক
চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা সাহেদ ফেরদৌস লিমন বলেন, দিনে সৈকত ও প্রকৃতি দেখে সময়টা ভালোই কেটেছে সবার। কিন্তু সন্ধ্যার পর হোটেলের রুমে যেন সময় আর কাটছিল না। এক বন্ধু জানালো মোটেল শৈবালের পাশে মেলা চলছে। পরিবার নিয়ে এখানে এসে বিনোদিত হয়েছি। রাতের সময়টা ভালোই কাটলো।
সদরের চৌফলদন্ডীর প্রবাসী জাহাঙ্গীর অভি বলেন, ভাই-বোন ও পরিবার নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে এসেছিলাম। সূর্য ডোবার পর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা পেলাম না। এত তাড়াতাড়ি বাড়িও ফিরতে মন চাইলো না। তাই মাইকের শব্দ শুনে মেলায় ঢুকেছি। এটা-সেটা কেনাকাটা, বিভিন্ন রাইডে চড়া, খাওয়ার মধ্যে কখন যে তিন ঘণ্টা কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
মেলায় আসা শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা ও নিশি মনি জানান, নৌকা, দোলনা, নাগরদোলা, ফাইভার ইলেকট্রিক চর্কি ও মিনি হাতি-ঘোড়ায় চড়ে প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। দেখেছি জাদু প্রদর্শনীও।
শিশুদের বিনোদনের জন্য মেট্রোরেলসহ ওয়াটার স্পিডবোট, জাম্পিং বেলুন, ওয়াটার বলে শিশুদের নিয়ে ভিড় করেছেন মায়েরা। নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন সবাই।
আরও পড়ুন-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে অবশেষে মিললো অনুমতি ()
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মেলা প্রাঙ্গণে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটক নির্মিত হয়েছে রাজকীয় ফটকের আদলে। প্রবেশ মুখেই স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। রয়েছে আলোকসজ্জাসহ সুউচ্চ টাওয়ার। বসানো হয়েছে ফায়ার ইউনিটি ও মেডিকেল টিম। ধুলা-বালি কমাতে পুরো মাঠে ইট বিছানোর পাশাপাশি আলোকসজ্জায় ঝলমলে করা হয়েছে চারপাশ। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়।
মেলা আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যান শাহেদ আলী সাহেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাটি ব্যতিক্রম ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয়েছে। রয়েছে বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা। মেলায় বসেছে শতাধিক স্টল ও একাধিক মুখরোচক খাবারের দোকান। মেলায় অংশ নেওয়া প্যাভিলিয়ন ও সাধারণ স্টলগুলোতে প্রসিদ্ধ গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাটজাত, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি ও ফার্নিচারের সমাহার।
মেলায় স্বনামধন্য দেশীয় ব্র্যান্ড প্রাণ-আরএফএল, এসিআই, দেশি-বিদেশি কার্পেট, জামদানি ও রাজশাহী সিল্ক শাড়ির প্যাভিলিয়নও রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটনে রাতের বিনোদনে স্থায়ী কিছু এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বাণিজ্যমেলাটিই রাতে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিনোদন অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এনিয়ে পরিবারসহ বেড়াতে আসা দূরদূরান্তের পর্যটকরাও খুশি।
আরও পড়ুন- সোনাদিয়ায় দেখা মিললো বাঘসদৃশ প্রাণী, দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক
মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক পৌর কাউন্সিলর সালাউদ্দিন সেতু জানান, মেলায় সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় চারপাশে ও ভেতরে রয়েছে সিসিটিভি। রয়েছে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলাস্থলে সব ধরনের হকার ও ভিক্ষুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফুডকোটে অনিয়ম রুখতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মূল্য তালিকা। ইভটিজিং রোধে মেলায় রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। আরও মাসখানেক চলবে মেলার কার্যক্রম।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মেলার সিসি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে দায়িত্বরত পুলিশ। ইভটিজিংসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। মেলায় স্থানীয় ছাড়াও বিদেশি ক্রেতা ও পর্যটক অংশ নিচ্ছেন, এটা আনন্দের।
এফএ/জিকেএস