ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মৃৎশিল্প

ঐতিহ্য ধরে রাখলেও তাদের খোঁজ রাখে না কেউ

নাসিম উদ্দিন | জামালপুর | প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত এর কারিগররা। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের এই আদিপেশা। বড়দের অভিজ্ঞতা নিয়েই বড় হয় পরিবারের সন্তানরা। এক সময় হয়ে ওঠেন জাতশিল্পী।

জামালপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মেলান্দহের নয়ানগর ইউনিয়নের আম্রিতলা পালপাড়া ওয়ার্ডে (মেঘারবাড়ি) গিয়ে দেখা মেলে এমন কিছু মৃৎশিল্প কারিগরের। বংশ পরম্পরায় তারা ধরে রেখেছেন এ পেশা। এখানে প্রায় ১৬টি পরিবারের বসবাস। এরা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। যাদের এখন সংসার চলে ল্যাট্রিনের পাটাতন তৈরি ও বিক্রি করে।

jagonews24

পালপাড়ায় কথা হয় রত্না পাল (৫০) নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক বছর আগে তার স্বামী মারা যান। সেসময় সন্তানদের নিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে এ পেশা বেছে নেন। এখন সংসারে এক ছেলে এবং তিনি। দুই মেয়ে ছিল, তাদের বিয়ে দিয়েছেন। মাটির তৈরি ল্যাট্রিনের এই রিং বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। এখন তারা মোটামুটি ভালোই আছেন।

তিনি জানান, প্রথমে তারা মাটি কিনে আনেন। তারপর মাটির ছানা তৈরি করে হাত ও পায়ের সাহায্যে পাটাতন তৈরি করে রোদে শুকিয়ে চুলায় পুড়িয়ে বিক্রির উপযোগী করে গড়ে তোলেন। একটি চুলায় একবারে ৮০-৯০টা পাটাতন পোড়ানো যায়। এতে খরচ হয় দু-তিন হাজার টাকা। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন পাটখড়ি, খড়, কাঠ, তুষ ও কাঠের ভুসি।

jagonews24

পাশে দাঁড়িয়ে রত্না পালের কথা শুনছিলেন তারই প্রতিবেশী রবণি চন্দ্র পাল। কথা হলে তিনি জানান, এখানে ১৫-১৬টি ঘর রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই জাতিগত ব্যবসা এটি। রোদ থাকলে তাদের ব্যবসা ভালো চলে। তবে বর্ষা মৌসুমে তাদের ব্যবসা বেশ মন্দা থাকে। আগে এগুলো কুয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু টিউবওয়েল আসার পর এর প্রচলন কমে গেছে।

তিনি আরো বলেন, তাদের জমিজমা কিছুই নেই। এগুলো বিক্রি করেই সংসার চলে। বর্ষা মৌসুমে যখন ব্যবসা মন্দা থাকে তখন প্রশাসনের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজখবর রাখে না। ছয়-সাত মাস আগে উপজেলা থেকে তাদের নাম লিখে নিয়ে গেলেও কিছু পাননি।

সূচিত্রা রানী পাল (৩৫)। দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার। দশ বছর ধরে তিনি এ পেশার সঙ্গে জড়িত।

jagonews24

তিনি জানান, বর্ষার সময় তাদের সংসার চলে না। তখন অগ্রীম টাকা নিয়ে চলতে হয়। এক গাড়ি মাটি ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হয়। এতে আড়াইশো থেকে তিনশো পাটাতন হয়। একটা বড় পাটাতন ২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ছোটগুলো বিক্রি হয় ১৩০-১৫০ টাকায়। এছাড়াও জায়গা বুঝে দাম কমবেশি হয়।

সঙ্গীতা, হরিচরণ পালসহ আরও অনেকেই জানান, পূর্বপুরুষের আদি এ পেশা তারা ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে কেউ তাদের খোঁজখবর রাখে না। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে তাদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, মৃৎশিল্পীরা তাদের পূর্বপুরুষদের এ আদি পেশা ধরে রেখেছেন। এতে একদিকে যেমন তাদের জীবিকার ব্যাবস্থা হচ্ছে অন্যদিকে যুগের পর যুগ তারা গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখছেন। খোঁজ নিয়ে তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।


এফএ/জিকেএস