ফরিদপুরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি
ফরিদপুর শহরের কাছেই ডোমরাকান্দি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ধার ঘেঁষেই নজরকাড়া সূর্যমুখী ফুলের হলুদ আঙিনা। শীতের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতেই আড়মোড়া ভেঙে এই সূর্যমুখী ফুলেরা জেগে ওঠে। আর সেই হলুদ ফুলের হাসিতে নিজেদের বৈকালীন সময় কাটাতে এখানে ছুটে আসেন শতশত প্রকৃতিপ্রেমী।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার গঙ্গাবর্দী এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খামারে কয়েক বছরের মতো এবারও চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরে দিনেদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাদ। বিএডিসি খামারের বিশাল এলাকাজুড়ে রোপণ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের বীজ। এখন প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পথচারীদের মন কাড়ছে সূর্যমুখী
বিএডিসি ফরিদপুর অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে এখানে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষাবাদ শুরু হয়। বীজ সংগ্রহের জন্যই প্রায় একযুগ ধরে এখানে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখীর। ফরিদপুরের বিএডিসির এ বাগানে প্রায় চার একর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। এখান থেকে ৪৫-৫০ মণের মতো বীজ উৎপন্নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ বিএডিসির মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানে সকাল থেকেই দেখা যায় মানুষের আনাগোনা। প্রতিদিনই এই হলুদ হাতছানিতে শামিল হয় শতশত তরুণ-তরুণী।
পরিবার নিয়ে বাগান দেখতে এসেছেন ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা কামরুজ্জামান হীরা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘুরে দেখলাম। পরিবারের সঙ্গে ছবি তুললাম। বেশ ভালো লাগলো। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারও হৃদয় কাড়বে।
মধুখালী থেকে আগত স্বপ্না আমিন জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখলাম। খুব ভালো সময় কাটলো। বাগানে প্রবেশ করলেই মনে হবে, হলুদের আভায় চারিদিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। সবুজ মাঠ আর হলুদ ফুলের ওপর মৌমাছি আর পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন: সবুজের মাঝে সূর্যমুখীর হলুদ রাজ্য
শহরের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ দাউদ আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন বিকেলে শহরসহ আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য্যপিপাসুরা দলবেঁধে আসছেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বেশ ভালো লাগলো। অপূর্ব এক অনুভূতি যা সচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না।
সালথার কৃষক কালাম শেখ জাগো নিউজকে বলেন, বাগান দেখতে এসেছি। আগামীতে আমি কয়েক একর জমিতে এই সূর্যমুখীর চাষ করবো। অল্প সময়ে ভালো ফলন ও ভালো লাভ হয় বলে জানতে পেরেছি।
বিএডিসি ফরিদপুরের যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. কামাল উদ্দীন বলেন, সূর্যমুখী চাষ একটি লাভজনক শস্য। সূর্যমুখী তেলের রয়েছে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত গুণাগুণ। দিনেদিনে সূর্যমুখী বীজের তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর চাষাবাদ জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। চাষিদের আগ্রহী করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ, বীজসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হাওরে প্রথমবারের মত সূর্যমুখী চাষ
এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষ নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু করা হয়। বীজ বপনের পর থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এ ফসল তোলা যায়। এতে তুলনামূলক খরচও কম। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুইবার সেচ দিতে হয়। এ আবাদে একরপ্রতি জমিতে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর ভালো ফলন হলে প্রতি একর জমিতে উৎপাদিত বীজ থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী ফুলের গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
তিনি আরও বলেন, পরামর্শ ও বীজ নিয়ে অনেকেই এখন সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন। দিনকে দিন ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে চাষিরা ব্যক্তি উদ্যোগে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন।
এন কে বি নয়ন/এমআরআর/এএসএম