ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

যার ইজিবাইক চুরি তার নামেই মাদক মামলা

জেলা প্রতিনিধি | যশোর | প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

যশোরের চৌগাছা উপজেলার হিজলী ক্যাম্পের এক বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরীহ ইজিবাইক চালককে ফেনসিডিল মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) চৌগাছা থানায় মামলা করেন হিজলী বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) নায়েক শামীম আহম্মেদ।

ভুক্তভোগী আবদুর সালাম যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

বাদী শামীম আহম্মেদ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ১০ জানুয়ারি ভোর ৪টা ২০ মিনিটে চৌগাছা থানার বল্লভপুর গ্রামে মেইন পিলার ৪১ থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বল্লভপুরের জনৈক সন্তোষ ঘোষের জমির দক্ষিণ পাশের মাঠের মধ্যে কাঁচা রাস্তার ওপর ইজিবাইকটি থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। চালক আবদুর সালাম ইজিবাইকটি ফেলে পালিয়ে যান। পরে ইজিবাইক তল্লাশি করে পেছনের সিটে ব্যাটারির পাশে বিশেষ কায়দায় সাজানো ভারতীয় ফেনসিডিলের ২৫ বোতল উদ্ধার করা হয়। এ মামলার বিজিবির তিন সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: এক বছরে সীমান্তে সাড়ে ৪ মণ সোনা জব্দ, অধরা গডফাদাররা

তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্য, বিজিবি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে বল্লভপুর গ্রামের সন্তোষ ঘোষের জমির পাশ থেকে ইজিবাইক ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বল্লভপুর গ্রামে সন্তোষ ঘোষ নামের কোনো ব্যক্তি নেই। প্রকৃত ঘটনাস্থল সুখপুকুরিয়া থেকে সাঞ্চাডাঙ্গা সড়কের বাগের মাঠ। যা সীমান্ত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে বাগের মাঠের অবস্থান। অথচ এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ঘটনাস্থল সীমান্তের ৫০০ গজের মধ্যে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও বিজিবি হিজলী ক্যাম্পের নায়েক শামীম আহমেদ বলেন, সুখপুকুরিয়া থেকে সাঞ্চাডাঙ্গা সড়কের বাগের মাঠ এলাকা থেকে ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়। চালক পালিয়ে যাওয়া চিনতে পারিনি। এজন্য মালিকের নামে মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘দেড় সপ্তাহ ধরে কাজ পাচ্ছি না, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি’

এজাহারের ঘটনাস্থল বল্লভপুর উল্লেখ ও অসঙ্গতির বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ভোরে অভিযান চালানো হয়। ঠিকমতো স্থান চিনতে পারিনি। এজন্য হয়তো ঘটনাস্থল ভুল হতে পারে। পাল্টা প্রশ্নের একপর্যায়ে সংযোগ কেটে দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুর সালাম পৈতৃক ১৭ শতক জমি বন্ধক রেখে একটি ইজিবাইক কিনেছিলেন। ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চলে। বাড়ির উঠানে ইজিবাইকটি তালা মেরে সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে ঘুমিয়ে পড়েন আবদুর সালাম। চোরেরা ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা আবদুর সালামকে উদ্ধার করেন। পরে বাইরে এসে দেখেন তার ইজিবাইকটা নেই।

একপর্যায়ে জানতে পারেন সুখপুকুরিয়া টু পুড়াপাড়ার সড়কের বাগের মাঠ এলাকায় ইজিবাইকটি ফেলে রেখে যায় চোরেরা। সেই ইজিবাইক উদ্ধার করেছে বিজিবির টহল দল।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হবিবর রহমান, মেম্বার জাহাঙ্গীর আলমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে হিজলী বিজিবি ক্যাম্পে যান আবদুর সালাম। তখন বিজিবি ক্যাম্প থেকে জানানো হয়, ইজিবাইকটি থানায় হস্তান্তর করা হবে। সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বুধবার আবদুর সালাম খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ইজিবাইক থেকে ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: যারা বিক্রেতা তারাই ক্রেতা

বিজিবির সাজানো মিথ্যা মামলায় একজন নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। আবদুর সালাম এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

ভুক্তভোগী আবদুর সালাম বলেন, ‘আমার ইজিবাইক চুরি হয়েছে। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তখনো বলেনি ইজিবাইকে ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। আমাদের বলেছে থানা থেকে ইজিবাইক নিয়ে নিতে। পরে শুনছি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি খেটে খাওয়া মানুষ। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। দোষী হলে যেকোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।’

এ বিষয়ে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হবিবর রহমান বলেন, ‘আবদুর সালাম এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার ইজিবাইকটি চুরি হয়েছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আমিও বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তখন বিজিবি বলেনি ওই ইজিবাইকে ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। পরে শুনছি আবদুর সালামের নামে মাদক মামলা হয়েছে।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম