১১ বছর মায়োপ্যাথি রোগে ভুগছেন মামুন, টাকার অভাবে বন্ধ চিকিৎসা
জন্ম থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আল-মামুনের (২৪)। হঠাৎ ১৩ বছর বয়সে শরীরের বিভিন্ন ব্যথায় ভুগতে থাকেন তিনি। ধীরে ধীরে তার একটি পা অবশ হতে থাকে। বরিশাল ও ঢাকায় বেশ কয়েকবছর চিকিৎসা শেষে জানা যায় মায়োপ্যাথি রোগে আক্রান্ত মামুন। এখন টাকার অভাবে বন্ধ আছে তার চিকিৎসা।
মামুন উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুরের বাসিন্দা টুকু সিকদারের ছেলে। তবে পারিবারিক কারণে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মা আসমা বেগমের সঙ্গেই থাকেন মামুন। শেষ সম্বল পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায় আসমা। তবে সবার সহযোগিতা পেলে সন্তানকে সুস্থ করার বাকি চেষ্টা চলাতে চান তিনি।
মামুন বলেন, অষ্টম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয় আমার। এরপর থেকে শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, পা ব্যথা হওয়া থেকে এ রোগের শুরু। ১১ বছর ধরে এ রোগে ভুগছি। প্রথম কয়েকবছর চিকিৎসা নিলেও টাকার অভাবে বিছানায় শুরু হয় আমার জীবন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে আমার পরিবার এখন নিঃস্ব। মা আমার সব কাজই করে দেন।
তিনি আরও বলেন, টাকার অভাবে অনেকদিন যাবত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারি না। তবে অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দেখেছি এ মায়োপ্যাথি রোগের কিছু ফিজিক্যাল থেরাপি আছে যা ভারতে দেওয়া যায়। কিন্তু সেই টাকা কই পাবো। আমি সুস্থ হয়ে বাঁচতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে তা সম্ভব।
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মামুনের মা আসমা বেগম বলেন, স্বামী ছাড়া এ ছেলেকে নিয়ে আমি এখন পথে বসেছি। নিজের যতটুকু ছিল সব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আমার ছেলেটাকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সহযোগিতা করলে তাকে সুস্থ করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, আমি কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি তারা জানিয়েছেন দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে ২৫-৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এ টাকা এখন কই পাবো। তাই আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই যাতে ছেলেটাকে সুস্থ করতে পারি। অন্তত ও যেন একা একা বিছানা থেকে উঠতে-নামতে পারে।
রেদোয়ান নামের এক প্রতিবেশী বলেন, পারিবারিকভাবে আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল তাদের। কিন্তু ওর চিকিৎসা করাতে গিয়া এখন তারা তিনবেলা খাওয়ার সামর্থ্যটুকু হারিয়েছে বলতে গেলে। তাই সবার কাছে অনুরোধ সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য।
খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. তাকবির রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রেসক্রিপশনসহ সার্বিকভাবে দেখে আমি তাকে প্রাথমিক একমাসের একটি চিকিৎসা দিয়েছি। ওষুধ খাওয়ার পর যদি ১০ শতাংশ সুস্থ হয় তাহলে দেশেই দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে৷ এতে কিছুটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ তবে এ ধরনের রোগীর খুব ভালো চিকিৎসা সিংগাপুর বা ভারতের ভেলরে হয়ে থাকে৷ যার আনুমানিক খরচ ২৫-৩০ লাখ টাকা।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপজেলা কার্যালয় অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবো।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসজে/কেএসআর