নাকের ডগায় এত অনিয়ম নিয়েও নির্বিকার প্রশাসন
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই শেরপুরে চলছে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। ভাটার কারণে আবাদি জমিসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কৃষি জমির উপরিভাগ কেটে ভাটায় ব্যবহারে উর্বরতা হারাচ্ছে আবাদি জমি। নাকের ডগায় এতসব কর্মকাণ্ড হলেও নির্বিকার প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সব জেনেও মুখে বুজে আছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করেছে ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি টিম। তবে সেই অভিযানেও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি ছিলো না।
শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শেরপুর জেলায় থাকা ৬১টি ইটভাটার মধ্যে ৫৮টিই চলছে অবৈধভাবে। এগুলোর কোনোটিরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের হালনাগাদ লাইসেন্স। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমি নষ্ট করে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা। এমনকি ইটভাটার আশপাশের দুই-তিন ফসলি জমির উর্বর মাটিও কেটে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট।
এছাড়া ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষেধ থাকলেও কয়লার দাম বেশি থাকায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ ও কাঠ। দিনে-দুপুরেই ট্রলি ও ট্রাকভর্তি করে বন থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে এসব গাছ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরিত্যাক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে, পৌর শহর ও আবাসিক এলাকার কমপক্ষে চারদিকে এক কিলোমিটার দূরে জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে শেরপুরের কোনো ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছেন না। জেলার বেশিরভাগ ইটভাটাই গড়ে উঠেছে আবাদি জমি ও লোকালয়ের মধ্যেই।
সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ মোতাবেক অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করে বন্ধের কাজ শুরু করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই আওতায় বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
অভিযানকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স হালনাগাদ না থাকায় আল আমিন-১ ও ২ ব্রিকসকে সাত লাখ টাকা, ফাতেমা ব্রিকসকে তিন লাখ, জনতা ব্রিকসকে দুই লাখ টাকা, মনিরা ব্রিকসকে তিন লাখ টাকা ও একতা ব্রিকসকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কয়েকজন ইটভাটা মালিক জানান, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান। ইটভাটার ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে তারা আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু অনুমোদনের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব না হওয়ায় সেগুলো আটকে আছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুবেল মাহমুদ বলেন, ইটভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ৪ ধারা মোতাবেক ইটভাটা স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু জরিমানা করা ইটভাটাগুলোর ছাড়পত্র ও লাইসেন্স হালনাগাদ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য যে নিয়ম-নীতি রয়েছে সেগুলো না মানায় ইটভাটাগুলোকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া যাচ্ছে না।
শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, জেলার অবৈধ ইটভাটাগুলোর মধ্যে ছয়টিতে অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দুটি ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাহেলা আক্তার বলেন, এরইমধ্যে শেরপুর জেলায় থাকা অবৈধ ইটভাটাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করে নীতিমালা অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এফএ/জেআইএম