হিলিতে আলুচাষে কৃষকের মুখে হাসি নেই
১২ বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলুচাষ করেছেন মাহফুজুর রহমান। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১১ বিঘা জমির আলু তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন। তবে প্রতি বিঘা জমিতে আলুচাষ করে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে বিক্রি করে তার চেয়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
শুধু মাহফুজুর নয়, তার মতো একই অবস্থা দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মাধবপাড়া গ্রামের আলু চাষিদের।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, বেলে মাটি হওয়ায় দুই দশক আগে এই এলাকায় তরমুজ চাষ হতো। তারপর ধীরে ধীরে আলুচাষ শুরু হয়। এবার উপজেলার ৯২৫ হেক্টর জমিতে আলুচাষ করা হয়েছে। সবজি চাষ করা হয়েছে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে। তবে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষাবাদ করা হয়েছে উপজেলার খট্টামাধবপাড়া এলাকায়। এখানে রোমানা এবং ক্যারেজ জাতের আলু বেশি চাষ হয়।
সরেজমিনে মাধবপাড়া মাঠে দেখা যায়, বিরামপুর-হাকিমপুর দুই উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট শাখা যমুনা নদী। নদীর দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠে জমিতে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষানিরা। এসব আলু নদীর পানিতে পরিষ্কার করছেন পুরুষ কৃষকরা। এরপর আলুগুলো স্থানীয় মাধবপাড়া মোড়ে হাটে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চাষি মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতবার আলুচাষ করে লাভ হয়েছিল। কিন্তু এবার সার, আলুর বীজ, সেচ ও কৃষকের খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান হয়েছে।'
মাধবপাড়া গ্রামের আলুচাষি জাহিদ ইকবাল রানা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আলুচাষ করে লাভ হয়নি বরং বিঘাপ্রতি ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তিনি জানান, এবার জমিচাষে গতবারের তুলনায় প্রায় ২০০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কৃষকের হাজিরা ছিল ৮০০, এবার ১ হাজার ২০০ টাকা। আইল বাঁধা ১ হাজার ২০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা। গতবার আলু উত্তোলনের খরচ প্রতি বস্তা ৩০ টাকা ছিল, এবার হয়েছে ৭০ টাকা। আলু পরিষ্কার করা লেবার খরচ গতবার মণপ্রতি ১০ টাকা ছিল, এবার ২০ টাকা। প্রতিটি বিষয়েই গতবারের তুলনায় এবার খরচের পরিমাণ দ্বিগুণ।
জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘এবার প্রতি বিঘা ক্যারেজ আলু লাগাতে খরচ হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৯ হাজার ৩০০ টাকায়। এতে বিঘাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপাড়া মোড়ে এক মাসের জন্য বসে আলুর হাট। এই হাটে প্রতিদিন ২২০০-২৩০০ বস্তা আলু (টাকা হিসেবে ১৮-২০ লাখ) বেচাকেনা হয়।
উল্লাপাড়া এলাকা থেকে আলু কিনতে আসা আসলাম হোসেন নামের এক পাইকার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় আলু উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এসময় এই এলাকার আলু দিয়ে সেখানকার চাহিদা পূরণ হয়। তাই এখানে আলু কিনতে এসেছি। তবে প্রথম দিকে দাম অনেকটা বেশি থাকলেও এখন অনেক কম।
ইমরান হোসেন নামের এক আলুচাষি বলেন, তিন বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলুচাষ করেছি। প্রথম দিকে বাজারে প্রতি মণ ৯০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ হবে।
উল্লাপাড়া এলাকার রায়হান মোল্লা নামের এক ব্যাপারী বলেন, প্রতি বছরই যখন প্রথম আলু ওঠে, তখন দাম একটু বেশি থাকে। এবারও বেশি দাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার ব্যাপারীরা যে এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে আলুর দাম কম থাকায় আমরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
কাটলা এলাকার আব্দুল্লাহ নামের এক চাষি বলেন, ‘আমি রোমানা জাতের আলু আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৩০ মণ। খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার টাকার মতো লাভ হতে পারে।’
জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলায় এবার ৯২৫ হেক্টর জমিতে আলুচাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে মাধবপাড়া এলাকায়। ২৪৮ হেক্টর জমিতে অন্যান্য সবজি চাষ করা হয়েছে।
মাহাবুর রহমান/এসআর/জিকেএস