ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে পরচুলায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন সহস্রাধিক নারী

মো: রাশেদুজ্জামান | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

জয়পুরহাটের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে শতভাগ রপ্তানিমুখী পরচুলা তৈরির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানা। জেলার প্রায় অর্ধশত কারখানায় হাতের বুননে পরচুলা তৈরি করছেন সহস্রাধিক নারী। বাড়িতে অলস বসে না থেকে বাড়তি রোজগার করে পরিবারে সচ্ছলতা আনার চেষ্টা করছেন তারা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাশিয়াবাড়ির কবিরাজপাড়া, পাঁচবিবি পৌর এলাকার মাতাশমঞ্জিল ও পাঁচবিবি উপজেলার উচাই, বেলখুর, শালাইপুর, সরাইল, শুকুরমনি, জয়হার, সালাখুর, শালাইপুর, কুয়াতপুর, মোহাম্মদপুর, বড়পুকুরিয়াসহ অর্ধশত গ্রামের নারীরা এ পরচুলা তৈরির কাজ করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার উচাই গ্রামে একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় ৩০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী কাজ করছেন। আবার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বেলখুর গ্রামের একটি কারখানায় কাজ করছেন বিভিন্ন বয়সের ২০ নারী। তাদের মধ্যে গৃহবধূ ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

জয়পুরহাটে পরচুলায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন সহস্রাধিক নারী

বিভিন্ন আকারের মাথার অবয়বে তৈরি এসব পরচুলার মূল উপাদান প্রসেসিং করা চুল। উদ্যোক্তারা ঢাকা থেকে চুল সংগ্রহ করে কারখানাতে পাঠিয়ে দেন। কারখানায় বসে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের মাথার খুলির ওপর বিশেষ ধরনের সুতার তৈরি নেট বসিয়ে ফারর্নিং ও নিডলের সাহায্য চুলগুলো স্থাপন করে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ পরচুলা বা হেয়ার ক্যাপ।

চুয়াডাঙ্গার ফারুক হোসেন তার শ্বশুরবাড়ি বেলখুর গ্রামে ওই এলাকার নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে এই ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ শুরু করেন প্রায় এক বছর আগে। ফারুক হোসেন বলেন, এই কারখানাতে ৪৮ জন নারীর কাজ করার মতো সুবিধাদি থাকলেও বর্তমানে ২০ জন নারী কাজ করছেন। এখানকার তৈরি পরচুলা ঢাকায় চীনা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়, যা পরবর্তীতে চীনে রপ্তানি করা হয়।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাশিয়াবাড়ি কবিরাজ পাড়ায় তিন মাস আগে একই ধরনের কারখানা স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গার আব্দুস সালাম। এই কারখানায় কাজ করছেন ৩০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী।

জয়পুরহাটে পরচুলায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন সহস্রাধিক নারী

এই পরচুলা তৈরির কারখানায় কাজ করেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসি আক্তার। তিনি বলেন, বড় আপুদের অনুপ্রেরণায় এই কাজে এসেছি, ভালো লাগছে।

কাশিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছুম্মা আক্তার বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে পরচুলা তৈরির কাজ করে প্রতিমাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা আয় করি। এ টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ ছাড়াও পরিবারে সামান্য হলেও সহযোগিতা করছি।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কবিরাজ পাড়ার মেরিনা আক্তার বলেন, পরিবারের সদস্য চারজন। স্বামী অসুস্থ। এখন পরচুলা তৈরির কাজ করে পুরো সংসার চালাচ্ছি। এই পরচুলা তৈরির কাজ করে প্রতিমাসে ছয়-সাত হাজার টাকা আয় করি।

কাশিয়াবাড়ি কবিরাজ পাড়ার কারখানার সুপারভাইজার কলেমা বেগম বলেন, বিভিন্ন আকারের পরচুলা তৈরি করে সর্বনিম্ন ৩৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন নারীরা।

জয়পুরহাটে পরচুলায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন সহস্রাধিক নারী

তিনি আরও বলেন, দক্ষ নারী শ্রমিকরা দৈনিক ছয় ঘণ্টা কাজ করে সর্বোচ্চ তিন-চারদিনে একটি বড় আকারের পরচুলা তৈরি করতে পারেন। সেই হিসেবে কেউ যদি এটাকে মূল পেশা হিসেবে নিতে চান তবে এ ধরনের কাজ থেকে প্রাপ্ত আয়ে চার-পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার সচ্ছলভাবে চালাতে পারবেন।

পরচুলা তৈরির উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক সজীব বাবু বলেন, চীনের ক্রেতারাই এখানে উৎপাদিত নানা ডিজাইনের পরচুলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে নারী শিল্পীদের হাতে তৈরি পরচুলা কারখানার উদ্যোক্তারাও ব্যবসায়িক সফলতা পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জয়পুরহাট জেলার উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, কর্মহীন আছেন এমন নারীরা ইচ্ছা করলে এরকম কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে স্বনির্ভরতা অর্জনে এগিয়ে যেতে পারেন। জয়পুরহাটে নারীদের পরচুলা তৈরির কাজ অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আমার বিশ্বাস।

সেইসঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

রাশেদুজ্জামান/এমআরআর/জেআইএম