শিক্ষা উপকরণের ব্যয়বৃদ্ধি
সন্তানের পড়ালেখার খরচে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা
নিত্যপণ্যের মতো ধীরে ধীরে বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের। বই-খাতাসহ সিংহভাগ উপকরণের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বেড়েছে স্কুলের পোশাক ও স্কুলব্যাগের দামও। এতে করে ছেলে-মেয়েদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। প্রভাব পড়েছে বইয়ের দোকান ও স্টেশনারিগুলোতে। আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমেছে কয়েকগুণ।
সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, গোগলটুলী ও রাজগঞ্জ এলাকাঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় গত ছয় মাসে পর্যায়ক্রমে কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতিবক্স, কলমবক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ডসহ সব সবধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে।
বর্তমানে ১২০ পৃষ্ঠার খাতা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ১৬০ পৃষ্ঠার খাতা ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়, ৬০-৭০ টাকার ২০০ পৃষ্ঠার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১২০ টাকা। ১১০-১২০ টাকার ৩০০ পৃষ্ঠার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা। খোলা কাগজ সাইজ ও কোম্পানিভেদে রিমপ্রতি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
মিনি ফাইল প্রতিটি ২০ থেকে বেড়ে ৩০-৪০ টাকা। জিপার ফাইল ২০ টাকা থেকে বেড়ে মানভেদে ৩০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডজনপ্রতি কলমের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। মার্কার পেন প্রতি ডজন ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ক্যালকুলেটর ১২০ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, জ্যামিতি বক্স ৫৫ থেকে বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজনপ্রতি ২০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। রাবার প্রতি বক্সে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
শিক্ষা উপকরণ কিনতে আসা সাইফুল আলম নামে এক অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, নিত্যপণ্যের মতো যেভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে আগামী দিনে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ যেখানে খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে শিক্ষা ব্যয় অসম্ভব।
নিউমার্কেট এলাকায় বই কিনতে আসা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র আনোয়ার হোসেন জানান, বইয়ের দাম যেভাবে বাড়ছে সামনের দিকে বই কিনে পড়া অসম্ভব হয়ে যাবে। অন্তত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত শিক্ষাসামগ্রীর দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যথায় অনেক শিক্ষার্থী মাঝপথে ঝরে পড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
খাতা-কলম কিনতে আসা আমেনা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অন্যদিকে বেড়েছে বই-খাতা-কলমের দাম। বর্তমানে আমার তিন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে। নির্ধারিত আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেব নাকি খাবারের জোগান দেব বুঝে উঠতে পারছি না।
রফিক গ্রন্থাগারের ম্যানেজার ফরিদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, কাগজের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বইয়ের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। এতে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। কমেছে বেচাবিক্রি। ফলে দোকানের ব্যয় পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কুমিল্লা বুকস্ অ্যান্ড স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত স্টেশনারি মালামালের দাম বাড়ছে। এতে করে আমাদের বিক্রি কমেছে। আগে যেখানে মানুষ এক রিম কাগজ কিনতো সেখানে এখন ১-২ দিস্তা কিনছে। কেউ যদি এক ডজন কলম নিতো এখন নিচ্ছে ৪-৫টা। সব মিলিয়ে আমাদের আয় কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণগ্রস্ত হবো।
কুমিল্লা জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান বাজারে কাগজের দামের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের ব্যবসায় অনেক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে বইয়ের দামও বেড়েছে। কাগজের দাম যদি না কমে তাহলে আমরা ব্যবসায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবো। কাগজ আমদানিতে শুল্ক কমাতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এসএইচএস/জেআইএম
টাইমলাইন
- ০১:৩৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ বই-কাগজ-ফটোকপিতে বেড়েছে খরচ, বাড়তি চাপে শিক্ষার্থীরা
- ১১:৪৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ স্কুলব্যাগ কিনতেও বাড়তি খরচ
- ০৯:৪৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ সন্তানের পড়ালেখার খরচে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা
- ০৯:৪৬ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ৬ মাসে কাগজের দাম দ্বিগুণ, খাতা তৈরি বন্ধের উপক্রম
- ০৯:৩২ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ এবার শিশুদের স্কুল জুতার জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা