১৯ বছর ধরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর দেখাশোনা করেন ফুল বানু
১৯ বছর ধরে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন ফুল বানু নামের এক নারী। প্রতিদিন কবরটি দেখাশোনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন তিনি। এর জন্য তেমন কোনো সহযোগিতা পান না তিনি।
ফুলবানু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মুগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত মুতালিব মিয়ার স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, দরুইন গ্রামে থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল আখাউড়া যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। সেখানে থাকে সমাহিত করা হয়। ১৯ শতক জায়গায় মোস্তফা কামালের সমাধি, স্মৃতিসৌধ রয়েছে।
এ বিষয়ে ফুল বানু বলেন, আমার তিন ছেলে। তাদের মতোই আমি মোস্তফা কামালকে ভালোবাসি। আমি ও আমার স্বামী এ কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতাম। তিনি মারা যাওয়ার পর গত ১৯ বছর আমি একাই কাজটি করি।
তিনি বলেন, মোস্তাফার মা-বাবা ও বোন এখানে মাঝে মাঝে আসতেন। একদিন তার মা বললেন, তোমার তিন ছেলের সঙ্গে আরও একটি ছেলে দিয়ে গেলাম। তার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আর কেউ এখানে আসেননি।
ফুল বানু বলেন, আমি আর কিছু চাই না। কবর এলাকা পরিষ্কার করে ফুলগাছ রোপণ করি। কিন্তু দেখা যায় সেই গাছগুলো চুরি করে নিয়ে যান। আমার একটাই দাবি সমাধির চারপাশে বাউন্ডারি দেওয়াল দেওয়া হোক।
কবরের জমি দানকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল প্রথম আমাদের বাড়িতে থেকে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে শহীদ হলে এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। জায়গাটা আমাদের। পরে সরকার নিয়ে নিয়ে নেয়। মোস্তফা কামালের সঙ্গে আমার মা-বাবার কবর রয়েছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান সাত বীরশ্রেষ্ঠর একজন এ আখাউড়ায় সমাহিত। সমাধির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ফুলবানুর প্রতি আমাদের সুদৃষ্টি থাকবে। এছাড়াও প্রশাসন থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া যায় তা আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
আখাউড়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ জামশেদ শাহ বলেন, অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালের সমাধি। সরকারের কাছে আবেদন সমাধির চারাশে দেওয়ালসহ আধুনিকায়ন করা হোক।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/আরএইচ/জেআইএম