ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খানাখন্দে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ভোগ

আসিফ ইকবাল | মেহেরপুর | প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২

জনদুর্ভোগের অপর নাম যেন মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর ভাঙা। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এ সড়কে চলাচলকারী অনেকে। নানা সমস্যা নিয়ে রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। সড়কটি পুনরায় নির্মাণের জন্য অনুমোদন হলেও এখনো শুরু হয়নি কাজ। দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার দাবি যাত্রীদের।

প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর ভাঙাচোরার কারণে রাস্তাটি প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তাটিতে চলাচল করতে হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে দুই থেকে তিন গুণ বেশি সময় লাগছে।

এদিকে, রাস্তার বেহাল দশায় যাতায়াত করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এছাড়া রাস্তাটিতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে অজানা আশঙ্কা নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। খানাখন্দের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে যানবাহনগুলোতেও দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে যাত্রী ও মালামাল বহনকারী যানবাহনগুলোকে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি মেরামত না করায় ক্ষোভ যাত্রী ও চালকদের।

মেহেরপুরের তিরাইল গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, রাস্তাটি নিয়ে ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। বারবার পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে মেরামত করা হলেও কিছুদিন না যেতেই তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। ধুলাবালিতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রাস্তার হিয়ারিং খুলে গেছে। রাস্তায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটিতে চলার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

jagonews24

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুল হান্নান জানান, এই রাস্তার দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। একদিকে হিয়ারিং করলে অন্যদিকের উঠে যায়। মাঝে মধ্যে সড়ক ও জনপথের লোকজন সংস্কারের জন্য মাপ করে যায়। কিন্তু রাস্তা মেরামতের কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।

অটোরিকশাচালক তাইজুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের সম্পূর্ণ অংশই খারাপ। ভাঙাচোরা রাস্তায় যাওয়া আসার ফলে গাড়ির বল বিয়ারিংসহ অন্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় কোনো অসুস্থ মানুষ গাড়িতেই উঠতে চায় না। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে থাকলেও দেখার মতো কেউ যেন নাই।

অ্যাম্বুলেন্সচালক মিন্টু হোসেন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বা কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিতে গেলে এ রাস্তায় যেন আরও অসুস্থতা বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি এক ঘণ্টার এ পথে দুই-তিন ঘণ্টা লেগে যায়।

কলেজছাত্র হাসান উদ্দীন বলেন, পরিবারের প্রয়োজনে এ রাস্তা দিয়ে মেহেরপুর জেলা শহরে যাতায়াত করি। রাস্তাটি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

jagonews24

আরেক কলেজছাত্র শামীম রেজা বলেন, কলেজে ক্লাস শুরু হয় ১০টায়। স্বাভাবিক সময়ে ১০ মিনিটে কলেজে পৌঁছানো যায়। কিন্তু বর্তমানে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগছে।

রাজশাহী থেকে মেহেরপুরে সবজি কিনতে আসা ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুর জেলার কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কিন্তু মেহেরপুর-কুষ্টিয়া রাস্তাটির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছি। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে বাইরে থেকে এখানে গাড়ি আসতে চায় না। আসলেও বাড়তি ভাড়া দাবি করে। রাস্তাটি মেরামত হওয়া জরুরি।

বাসচালক রমিজ আলী বলেন, গাংনী টার্মিনাল এলাকা, গাড়াডোব, পুড়াপাড়া, বাঁশবাড়িয়া, মালশাদহ, তেরাইল, অলীনগর, বামন্দী, ছাতিয়ান, বাওট, আকুবপুর, খলিশাকুণ্ডি পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির বেশির ভাগ অংশে পিচ ও পাথর উঠে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে এক প্রকার ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, বাস, পণ্যবাহী পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা ধরনের পরিবহন চলছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

আরেক বাসচালক মজিবর রহমান বলেন, রাস্তার যে অবস্থা তাতে গাড়ি চালানো যায় না। ভাঙাচোরা রাস্তায় যাওয়া-আসার ফলে গাড়ির বল বিয়ারিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়ক বিভাগ প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা মেরামত বাবদ খরচ করলেও এক মাসও টেকে না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সড়কটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

jagonews24

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ৬৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার। চলতি অর্থবছরে (জুন/২৩) কাজের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আজঅব্দি তা শুরু হয়নি। টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কাজটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শেষ করা হবে বলে জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাটি তৈরি হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব পরিবর্তন হবে।

তিনি আরও বলেন, সড়কটি নির্মাণের জন্য এরইমধ্যে ৬৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়ার্ক অর্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি ফেজে সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

এমআরআর/জিকেএস