মানিকগঞ্জের শিবালয়
৬ বছর ধরে পানির নিচে ২০০ একর ফসলি জমি
‘ভাই, দ্যাহেন (দেখেন) আমার দুই বিঘা জমি পানির তলে (নিচে)। এই ক্ষেতের ফসলে আমার হারা (সারা) বছরের খাবার জুটতো। কিন্তু এ্যাহন (এখন) চাষ করতে পারি না। বাধ্য হইয়া অন্যের বাড়ি দিনমজুরির কাম কইরা সংসার চালাই। নিজের জমিজমা থাকতেও আমি এ্যাহন দিনমজুর।’
কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের নারায়ণ তেওতা গ্রামের বাসিন্দা মজনু সরদার। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার জমিতে এখন কোনো চাষাবাদ হয় না। সারা বছরই পানি আটকে থাকে জমিতে।
তারমতো একই অবস্থা তেওতা ইউনিয়নের নারায়ণ তেওতা ও সমেজঘর গ্রামের কয়েকশ কৃষক পরিবারের। পানি প্রবাহের একমাত্র খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফলে অনাবাদি পড়ে আছে প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি। অথচ একসময় এসব জমিতে ধান, পাট, সরিষা, সবজিসহ নানা ফসলের আবাদ হতো।
সরেজমিন দেখা যায়, ফসলি জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত। আগাছা আর কচুরিপানায় ঠাসা। দেখে বোঝার ওপায় নেই এখানে একসময় চাষাবাদ হতো।
পানি নিষ্কাশনের জন্য গতবছর প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করে বিএডিসি। কিন্তু খাল ভরাট আর দখল হয়ে যাওয়ায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না।
জমির পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় বিধবা হাজেরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, এখানে তার তিন বিঘা জমি আছে। এটিই তার সম্বল। কিন্তু ৫-৬ বছর ধরে কোনো কাজেই লাগছে না জমিগুলো। ফলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে তার।
আলামিন, মতিন, আয়নাল, দুলাল ও মাসুদ মিয়াসহ আরও কয়েকজন জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খনন করা হয় প্রায় ৭০ বছর আগে। এর এক অংশ মিলেছে যমুনা নদীর সঙ্গে। অন্য অংশ আরেকটি বিলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কিন্তু খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভরাট হয়ে গেছে। দখলও করে নিয়েছেন অনেকে। ফলে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ফসলি জমি থেকে পানি বের হচ্ছে না।
তারা জানান, প্রায় ছয় বছর ধরে জমিগুলো অনবাদি পড়ে আছে। চাষের জমি থাকতেও কোনো ফসল ফলাতে না পেরে দিশেহারা অনেক মানুষ। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এলাকার একটি চক্র কম দামে জমিগুলো কিনে নিচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান জানান, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএডিসি ও ভূমি অফিসের সহযোগিতায় খালটি খনন করে জমির পানি বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে গত ছয় বছরেও কেন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তা।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এসআর/এমএস