বন্যায় বই-খাতা ভেসে যাওয়া রীমা পেল জিপিএ-৫
খোলা বাজারের (ওএমএস) ৩০ টাকা কেজির চাল কিনতে মা তখনো লাইনে দাঁড়ানো। মেয়েটি স্কুলে গেছে ফলাফল জানতে। বাবা ফুটপাতে বসে সবজি বিক্রি করছেন।
কয়েকঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ কেজি চাল হাতে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন মা পিয়ারা খানম। তিনি যখন এ প্রতিবেদকের কাছে শুনলেন মেয়ে রীমা (স্বর্ণালী আক্তার রীমা) জিপিএ-৫ পেয়েছে তখন তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
পিয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়ের ভালো ফলাফলে কষ্ট আরও বেড়েছে। ওকে পড়াশোনা করাতে পারবো কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আাছি।’
রীমা সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ জুনের বন্যায় রীমাদের ঘরের ভেতর দিয়ে স্রোত গেছে। প্রবল স্রোতে রীমার বইপত্রসহ ঘরের সবকিছু ভেসে যায়। পরে মেয়ের বইয়ের ব্যবস্থা করতে অনেকের কাছে গেছেন মা পিয়ারা বেগম। কিন্তু বইয়ের ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে একজন সাংবাদিক নতুন বই কিনে দিয়েছিলেন। ওই বই একমাস পড়েই পরীক্ষা দিয়েছে রীমা। ফলাফল জিপিএ-৫।
রীমার আরও দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। বাবা নুরুল আমিন ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেন। দিনে দুই থেকে আড়াইশ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়ে সংসার চলে না। রীমার বাকি তিন ভাইবোন স্কুলে লেখাপড়া করছে। এ অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই চালের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় রীমার মায়ের।
রীমা বলে, ‘বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছি। প্রতিকূলতার মধ্যেই এগিয়ে যেতে চাই। বড় হয়ে আমি ডিসি হতে চাই।’
সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মাশহুদ চৌধুরী বলেন, সীমিত আয়ের এই মেয়েটির সংগ্রাম অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
লিপসন আহমেদ/এসআর/এএসএম