ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জের বন্দর

‘লেডিস পাম্পে’ তেল সরবরাহ করেন নারীরা

রাশেদুল ইসলাম রাজু | প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের কামতাল এলাকায় অবস্থিত প্লানা ফিলিং স্টেশন। ২০০১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে ফিলিং স্টেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম। বর্তমানে তার ছেলে সাইফুল ইসলাম এটির দেখভাল করেন।

ফিলিং স্টেশনটির বিশেষত্ব হলো এখানে পুরুষদের পাশাপাশি তেল সরবরাহের কাজ করছেন নারীরাও। দুই শিফটে মোট ৯ জন নারী এখানে কাজ করেন। একজন নারী ক্যাশিয়ারও রয়েছেন। কাজের প্রতি মনোযোগ ও দায়িত্বশীলতার কারণে এরই মধ্যে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছেন নারী কর্মীরা।

ফিলিং স্টেশনটিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তেল সরবরাহের কাজ করছেন শম্পা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী। কাজের সন্ধানে ১০ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে আসেন। প্রথমে তিনি সোনারগাঁয়ের চৈতী গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তার মা এই ফিলিং স্টেশনের পাশেই অবস্থিত হোটেলে কাজ করতেন। মায়ের সুবাদে এখানে কাজ করার সুযোগ পান শম্পা।



গার্মেন্টসের তুলনায় এখানকার কাজে পরিশ্রম কম উল্লেখ করে শম্পা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, গার্মেন্টসে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। মাঝেমধ্যে এর চেয়ে বেশি সময়ও কাজ করতে হতো। ছোট দুই সন্তানকে ঠিকমতো সময় দিতে পারতেন না। আবার বেশি পরিশ্রম করার পরও যথাসময়ে বেতন পেতেন না। তবে ফিলিং স্টেশনে এসব সমস্যা হচ্ছে না।

এখানে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় শম্পাকে। যথাসময়ে বেতন পেয়ে যান। তার থাকার জন্য পাম্প কর্তৃপক্ষ কোয়ার্টারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে কাজের ফাঁকে সন্তানদের সময় দিতে পারছেন তিনি।

‘প্রথমদিকে এখানে তেল সরবরাহ করার কাজ করতে গিয়ে একটু অস্বস্তি লাগতো। এখন মানিয়ে নিয়েছি। তবে গত পাঁচ বছরে তেল সরবরাহ করতে গিয়ে কখনো খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি’, যোগ করেন শম্পা খাতুন।

প্লানা ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার সেতু আক্তার বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর ধরে এখানে কাজ করছি। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে এখানে কাজের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। ফিলিং স্টেশনের সবাই খুব আন্তরিক। তাই কাজ করতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।’

ফিলিং স্টেশনটিতে তেল নিতে আসা কাউসার আহমেদ নামের একজন কাভার্ডভ্যান চালক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মালামাল নিয়ে যাতায়াত করেন। বিভিন্ন সময় এই পাম্প থেকে তেল নেন। তবে এখানে তেল নিতে কখনো ভোগান্তির শিকার হতে হয়নি। এখানে কর্মরত নারীরা খুব সুশৃঙ্খলভাবে তেল সরবরাহ করে থাকেন।

আজিজুল হাকিম। পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ এলাকায় তার বাড়ি। মোটরসাইকেলের তেল শেষ হয়ে গেলে বেশিরভাগ সময় তিনি এই ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নেন।

আজিজুল হাকিম বলেন, অন্যান্য ফিলিং স্টেশনের তুলনায় এখানকার তেল তুলনামূলক ভালো। তারা সঠিক পরিমাণে তেল পান। এখানে নারীদের কাজ করার বিষয়টি ইতিবাচক।

চালক রফিক মিয়া বলেন, এই ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা জ্বালানি তেল সরবরাহের কাজটি করে আসছে বলে জায়গাটি এখন ‘লেডিস পাম্প’ নামে পরিচিত হয়ে গেছে। আমি অধিকাংশ সময় এখান থেকে তেল নিয়ে থাকি। অন্যসব ফিলিং স্টেশনে পুরুষদের কাজের তুলনায় এই ফিলিং স্টেশনের নারীরা ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তাই আমার মতো অনেক বাসচালকই এখান থেকে তেল নেন।

প্লানা ফিলিং স্টেশনের সুপারভাইজার আব্দুল জলিল বলেন, এখানে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নারীরা কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে পুরুষরা কাজ করেন। এখানে কর্মরত প্রত্যেকটি নারী অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। কেউই কাজের প্রতি কোনো অবহেলা করেন না।

ফিলিং স্টেশনটির ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, নারীদের কর্মসংস্থান করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আমাদের এই ফিলিং স্টেশনের মালিক সাইফুল ইসলাম চান মেয়েরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাক। তিনি এটি ছাড়াও তার মালিকানাধীন অন্যান্য কারখানাতে নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখানে নারীদের জন্য শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়ার সব সুব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের পরিচালনার প্রতিটি শিফটে আমাদের একজন সুপারভাইজার রয়েছেন।

‘এটি ছাড়াও মালিকের আরও দুটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে একটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত। ওই ফিলিং স্টেশনেও নারীরা তেল সরবরাহ করে থাকেন’, যোগ করেন ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান শাহীন।

এসআর/এএসএম