হাসপাতালে তারামন বিবি
ফুসফুস ও শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। সোমবার দুপুরে তাকে কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়।
এর আগে তিনি গত জানুয়ারিতে রংপুর সিএমএইচ এ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি গত ৩১ জানুয়ারি রংপুর সিএমএইচ থেকে নিজ বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুরে যান। কিন্তু দু’সপ্তাহ পর তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সোমবার দুপুরে তাকে ময়মনসিংহের হাসপাতালে আনা হয়। তিনি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগের ডা. এসকে অপু ও ডা. আশীষ কুমার রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ডা. এসকে অপু জানান, তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। তার চিকিৎসার ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছেন। তিনি ফুসফুসের জটিল রোগে ভুগছেন বলেও জানান ।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য `বীর প্রতীক` উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাঁকে খুঁজে বের করেন এবং নারী সংগঠনগুলো তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তুলে দেন।
বর্তমানে তারামন বিবি কুড়িগ্রাম এর রাজিবপুর তার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে আছেন। স্বাধীনতার ২৪ বছর পর্যন্ত তারামন বিবি সরকারি কোন সাহায্য পাননি। নারী মুক্তিযোদ্ধা বলে তাঁকে অবহেলা করার হয়েছে এমনটি আক্ষেপ তার রয়েছে।
তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের একটা বই আছে `বীর প্রতীকের খোঁজে`। ‘করিমন বেওয়া’ আনিসুল হকের রচিত একটি বাংলা নাটক যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাংলাদেশের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি।
জানা গেছে, তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। তিনি ‘বীর উত্তম’প্রতীকপ্রাপ্ত।
মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্না বান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাঁকে অস্ত্র চালনা শেখান।
একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান।
আতাউল করিম খোকন/এসএস/আরআইপি