ওএমএস
৫ কেজি চালের জন্য খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থান
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএসের পাঁচ কেজি করে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল পেতে খোলা আকাশের নিচে রাতভর অবস্থান করেন ২৫-৩০ জন নারী।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে উপজেলার রহনপুর কলেজ মোড় এলাকার রাব্বানী ডিলারের দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
খোলা আকাশের নিচে রাতভর অবস্থান করা সেলি নামের একজন গৃহবধূ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তবুও এ টাকা দিয়ে চাল কিনে খেতে হয়। বর্তমান বাজারে চালের কেজি ৬০ টাকা। এতে আমাদের আয়-রোজগারের তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে। তাই কয়েকদিন ধরেই ভাবছি ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল নেবো। কিন্তু পরিমাণে কম আসায় ১০ দিন ঘুরেও আমার কপালে চাল জোটেনি। তাই গতকাল সারারাত জেগে ছিলাম। সকালে চাল নিয়ে বাড়িতে আসি। আমার মতো ২০-৩০ জন সারারাত জেগে সকালে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’
জেসমিন বেগম নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, ‘সংসারে অভাবের তাড়নায় ১৫ দিন ধরে পাঁচ কেজি চালের জন্য ঘুরছি। কিন্তু পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে গতকাল সারারাত জেগেছি। সকালে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরি।’
রহনপুর পৌর এলাকার কাঠিয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা কারিমা বেগম। তার পরিবারে ৯ জন সদস্য। পাঁচ কেজি চালের জন্য বুধবার পৌর এলাকার গোলাম রাব্বানী ডিলারের দোকানে ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু বরাদ্দ অল্প হওয়ায় আর মানুষের সমাগম বেশি থাকায় চাল পাননি। পরে সারারাত জেগে সকালে চাল নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
কারিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মতো আরও প্রায় ৩০ জন নারী রাতে জেগে ছিলেন চালের জন্য। কেউ কিছুক্ষণ বাসায় বিশ্রাম নিয়ে আবার আসেন। এভাবেই আমরা রাত পার করেছি।’
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তারক-উজ-জামান বলেন, রহনপুর পৌর এলাকায় চারজন ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। এক টন করে চারজন ডিলারের জন্য চার টন দৈনিক চাল বরাদ্দ। তবে কলেজ মোড়ে পাঁচ কেজি চালের জন্য সারারাত জেগে থাকার কথাটি আমার জানা ছিল না। এ অবস্থায় এক টনের বেশি বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলবো।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে আমাদের এক টনের বেশি চাল দেওয়ার নিয়ম নেই। তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি এ বিষয়ে কথা বলবো।
সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম