তিন ছেলের কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি না, মাকে ফেলে গেলেন রাস্তায়
নাটোরে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেছেন এক ছেলে। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর চাপের মুখে ওই বৃদ্ধাকে আপাতত তার নাতির কাছে রাখা হয়েছে। অমানবিক এ ঘটনা ঘটেছে সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে।
বুধবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে যান তার ছেলেরা।
গ্রামবাসীরা জানান, তারাবানু নামের অশীতিপর ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই বিঘা জমি নিজেদের নামে লিখে নেন তিন ছেলে। সে সময় পারিবারিক সিদ্ধান্ত হয় তিন ছেলের কাছেই একমাস করে থাকবেন তিনি। তবে ছোট ছেলে একমাস রাখার পর তাকে নিয়ে যাননি বড় ছেলে। মাস শেষ হওয়ার দুদিন পর বিরক্ত হয়ে রাতের আঁধারে অসুস্থ ওই বৃদ্ধাকে বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে যান ছেলে।
বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানান। পাশাপাশি গ্রামবাসীরা বৃদ্ধার তিন ছেলেকে আটক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বড় ছেলের ছেলের (নাতি) ঘরে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মুসা আকন্দ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতেই এসিল্যান্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় আমৃত্যু ওই বৃদ্ধার আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
ছাতনী ইউনিয়নের সদস্য নুরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘বড় ছেলে মানিক, মেজ ছেলে হানিফ ও ছোট ছেলে আজাদ কেউই তাদের মাকে খাওয়াতে রাজি হননি। পরে বড় ছেলের ঘরে নাতির কাছে ১৫ দিন রাখার ব্যবস্থা করা হয় ওই বৃদ্ধাকে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই বিঘা সম্পত্তি তিন ছেলেদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন তারাবানু। এখন তিনিই সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ছাতনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েও তিনি বিষয়টির কোনো সমাধান করতে পারেননি। তিনি আরও জানান, পুরো ইউনিয়নের মধ্যে ওই তিন ভাইয়ের আচরণ সবচেয়ে রুক্ষ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ জানান, ওই বৃদ্ধার নামে বিধবা ভাতা রয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে তাকে আপাতত তার মেয়ের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। অভিযোগ পেলে ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেজাউল করিম রেজা/এসআর/জেআইএম