চট্টগ্রাম ওয়াসার পাওনাদারদের শীর্ষে সিটি কর্পোরেশন
চট্টগ্রাম ওয়াসার পাওনাদারদের শীর্ষে সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের কাছে ওয়াসার বকেয়া পানির বিল পাওনা প্রায় চার কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৩৩টি সংযোগের বিল পরিশোধ না করে বিল খেলাপির শীর্ষস্থান দখল করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। এছাড়া চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াসার মোট পাওনা ২৭ কোটি টাকারও বেশি।
এসব বকেয়া বিল আদায়ে খুব দ্রুত অভিযানে নামছে ওয়াসা। চালানো হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও। এমনটাই জানালেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন । তিনি বলেন, পাওনা আদায়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ করে টাকা আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বকেয়া আদায়ে কঠোর হলেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। ওয়াসার একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ টাকারও অধিক পানির কর পাওনা ওয়াসার। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৭ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৭ টাকা এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৮ টাকা।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত, পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিছু বিল প্রদান করেছে বলে রাজস্ব বিভাগ নিশ্চিত করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
জানা যায়, বতর্মানে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে ৬১ হাজার। ওয়াসার তথ্য মতে ডিসেম্বর/১৫ পর্যন্ত ১৩৩টি সংযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন রয়েছে ওয়াসার পাওনাদারের শীর্ষে। যার পরিমাণ তিন কোটি ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৬ টাকা, গণপূর্ত দুই কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৮ টাকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক কোটি ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮২২ টাকা, হাউজিং অ্যান্ড সেটেলম্যান্ড ডিভিশন এক কোটি ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৯ টাকা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩০ টাকা, সিভিল সার্জন ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৫ টাকা, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ২১ লাখ ১৩ হাজার ৫৬২ টাকা, ইমারত সম্পদ বিভাগ, পি ডব্লিউ ডি রিসোর্ট ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৬ টাকা, সড়ক ও জনপথ ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ টাকা।
এছাড়াও চট্টগ্রাম কলেজ ৩২ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকা, পি ডি বি ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৩ টাকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৮ টাকা, চট্টগ্রাম নার্সিং ইনস্টিটিউট ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩২২ টাকা, ইমারত সম্পদ বিভাগ রিসোর্স ডিভিশন ১১ লাখ ৭০ হাজার ৮৬১ টাকা, বন, চট্টগ্রাম ডিভিশন -২১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭ টাকা, চট্টগ্রাম রেলওয়ে ১১ লাখ ৯৭ হাজার, ১৩১ টাকা এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক চার লাখ ৫৭ হাজার ৪৭৪ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৩৩টি সংযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অনাদায়ী প্রতিষ্ঠানে প্রথম হলেও মাএ একটি সংযোগ নিয়ে সর্বোচ্চ ১৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ী তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং দু`টি সংযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক।
এদিকে, ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিল্লোল বিশ্বাসের নেতৃত্বে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, পাওনা আদায় ছাড়াও অননুমোদিত গভীর নলকূপগুলো লাইসেন্সের আওতায় আনার চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম ডি) প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল্লাহ বলেন, ওয়াসা হচ্ছে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। সেবার বিনিময়ে সম্মানিত গ্রাহকরা অর্থ দেন। দু`পক্ষের সম্পর্কের ব্যালেন্স রেখেই এগিয়ে যেতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় সরকারি ও বিভিন্ন দেশের অর্থায়নে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরীতে পানি সঙ্কট থাকবে না। তবে আমাদেরকে পানি অপচয় রোধ করতে হবে। দূষণমুক্ত রাখতে হবে হালদা ও কর্ণফুলী নদীকে।
জীবন মুছা/এমজেড/এমএস