যে মেলায় জীবনসঙ্গী মেলে
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যতিক্রমী মেলা বসেছে। যে মেলায় সমাগম হয় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের। প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলার আয়োজনও করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলা হিসেবে মেলাটি সাধারণত দুর্গাপূজার পরদিন বসে। তবে মেলার আরেকটি আকর্ষণ হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাহারি সব কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, গৃহস্তালিকাজে ব্যবহৃত দা কুড়াল বাশিঁলাসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। এসব অলংকার কিনতে দরদাম করছেন বাড়ির বউ-ননদরা। বউ মেলায় পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। ছিল নাগরদোলাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুগযুগ ধরে চলে আসা এ মেলার বয়স কমপক্ষে ২০০ বছর। মূলত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা এ মেলায় এসে তাদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি পরিণত হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের মিলন মেলায়।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা বিন্দি মার্ডী নামে এক নারী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি এ মেলা। বছরের একটা দিন বাড়ির সব ছেলে মেয়েরা মেলায় ঘুরতে আসে। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করি।’
পঞ্চগড় থেকে আসা মেরিন্ডা মার্ডী নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এলাকায় আনন্দের আমেজ সৃষ্টি হয়। শুধু আদিবাসী নয় সব ধর্মের লোকদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরা আসে। এতে পুরো এলাকা মিলনমেলায় পরিণত হয়। এখানে নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা তাদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়।’
নীলফামারী থেকে আসা রাজেন হেমরন (২৩) ও ও কাকুলি হেমরন (১৮) বলেন, ‘আমরা একে অপরকে পছন্দ করে নিয়েছি। আমরা দুজনে অনেক কথা বলেছি, নিজেদের মধ্যে ভালো ও খাপার লাগার বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবারকে গিয়ে জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার কথা জানাবো। অভিভাবকেরা বিয়ের আলোচনা করবেন।
বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতি মেলার আয়োজন করে থাকে। সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডী বলেন, মেলার এক সময় নাম ছিল বউ মেলা। সম্প্রতি মেলার নামকরণ হয়েছে আদিবাসী মিলন মেলা। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা এ মেলায় আসে। তবে মেলার অতীত ঐতিহ্য হলো তরুণ তরুণীরা মেলায় বেড়াতে এসে নিজেদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। মেলায় যাকে যার পছন্দ হয়, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে বোঝাপড়া করে নেয়। পরে পরিবারের প্রধানদের জানায়। দুই পরিবারে আলোচনার মাধ্যমে বিয়ের ব্যবস্থা হয়। এখনো অনেকে এ মেলায় এসে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে গত দুবছর মেলা বন্ধ ছিল। এ বছরে আবার চালু হওয়ায় এলাকাবাসী খুব খুশি।
এমদাদুল হক মিলন/এসজে/এমএস