ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আলু হিমাগারে রেখে বিপাকে চাষিরা, কেজিতে লোকসান ৫ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৮:৫৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

বেশি লাভের আশায় হিমাগারে আলু মজুত করে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম তুলনামূলক কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা। একই আলু পাইকারি বাজারে ১৯ থেকে ২০ টাকা। চাষিদের উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের হিসাবে প্রতিকেজি আলুতে গড়ে লোকসান সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা।

মৌসুমের শুরুর দিকে বেশি দাম পেয়েও আলু বিক্রি না করে অধিক লাভের আশায় হিমাগারে মজুত করেছেন জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে এখন বাজারে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এমন দরপতনের কারণে হিমাগারগুলোয় বর্তমানে ভরা মৌসুমেও কৃষক ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

হিমাগার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার আলুর দাম কম। হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না অনেকে। এখন পর্যন্ত ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারে পড়ে আছে। কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে ৮০ লাখ বস্তা ওজনের দিক দিয়ে যা ৪ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছরের জুন-জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৪ টন আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এখনো হিমাগারে পড়ে রয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৪৩ টন আলু। তবে এই বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের পুরোটাই চাষিদের জন্য সময় থাকবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) প্রকারভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। বাজারে আলুর যে দাম তাতে আরও মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। সঙ্গে আলু কিনতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের টাকা এবং আলু রাখার ভাড়ার টাকা তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হিমাগার মালিকদের। লোকসান ঠেকাতে আলু রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টারিক্স জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত কয়েক বছর থেকেই বাড়ছে আলুর চাষ। ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদনের আশা করলেও পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা ৮ লাখ ৭৫ হাজার টন নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ।

কয়েকজন চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বাজারে আলুর দাম গতবছরের তুলনায় কম। প্রতিকেজি ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, অ্যাস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫ টাকার বেশি। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে সে অনুযায়ী প্রতিকেজি আলুতে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন ও কিনে মুজত করা আলুতে সাড়ে চার টাকা লোকসান হচ্ছে।

তানোর উপজেলা যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু আছে। বাজারে দাম ভালোই আছে কিন্তু পাইকারিতে দাম নেই।

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৭ টাকা। ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলে বাঁচতাম। আমার ২ হাজার ৪০০ বস্তা আলু বর্তমানে স্টোরে আছে। চলমান বাজারে বিক্রি করলে কোনো লাভ হবে না।

মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু-বকর বলেন, বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে আলু। আর পাইকারিতে সাড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। এ হলো আমাদের দেশের সমস্যা; সিন্ডিকেটের পকেটে চাষিদের টাকা। পর্যাপ্ত আলু চাষ হলেও চাহিদা আছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। চাষিরা এ কারণেই লোকসানে পড়ছেন। কৃষকের এ সমস্যা সমাধানে আমরা সরকারি দপ্তরে জানিয়েছি।

কী পরিমাণ আলু হিমাগারগুলোতে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আলু হিমাগার থেকে বের করা হচ্ছে প্রতিদিনই। একটা রিপোর্ট করা হচ্ছে, ফাইনাল হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে আলু সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। এখনো দুইমাস সময় আছে আলুর দাম বাড়ার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে আলুর দাম কিছুটা বাড়ে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এমআরআর/এএসএম