জিকা ভাইরাস রোধে বেনাপোলে সতর্কাবস্থা
বাংলাদেশে যাতে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা জিকা ভাইরাস আক্রান্ত বিদেশি কোনো যাত্রী আসছেন কিনা সে ব্যাপারে নজর রাখছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় এখানে কোনো যাত্রীর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
ভারত থেকে আসা দেশি-বিদেশি পাসপোর্ট যাত্রী, ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টিম গঠন ও থার্মাল স্ক্যানার দেয়া হলেও কোনো কাজে আসছে না। ট্রাকচালক ও হেলপাররা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই দেশে ঢুকছে বলে জানান বন্দর ও ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্টরা। ট্রাকে করা হচ্ছে না প্রতিরোধক কোনো স্প্রে।
চেকপোস্টে কর্মরত কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা মাস্কও ব্যবহার করেন না। এখানে কোনো মেডিকেল অফিসারসহ টিমের চিকিৎসকদের না থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে ২/৩ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও একজন গ্যাভি কর্মী (এনজিও) চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছেন।
জিকা ভাইরাস এর ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেনাপোল চেকপোস্ট পরিদর্শনও করেননি।
চেকপোস্ট স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া জিকা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমাঞ্চল। ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের প্রায় চারশ বিদেশি যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও হেলপাররা। তাদের কেউ যদি এ ভাইরাসে সে আক্রান্ত হন, তার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ আশঙ্কা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করেছে চেকপোস্টের স্বাস্থ্য বিভাগ।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন দেশের ৮৬৫ জন নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন। এর মধ্যে ভারতের ৮১৯ জন, অস্ট্রেলিয়ার চার, শ্রীলঙ্কার এক, বেলারুসের দুই, ব্রিটিশ এক, মালয়েশিয়ার দশ, আমেরিকার আট, কানাডার নয়, ইতালির এক ও ইন্দোনেশিয়ার দশ জন নাগরিক রয়েছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, বিদেশিরা ইমিগ্রেশনে আসার পরপরই তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জোতিষ চন্দ্র রায় জানান, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে `ইবোলা` ও `সোয়াইন ফ্লু` রোধে যে মেডিকেল টিম রয়েছে তারা জিকা ভাইরাসের কাজ করছেন।
এখনো সম্ভাব্য কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সতর্ক আছি। এর আগে ইবোলা ও সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করেছে চেকপোস্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্র। নতুন করে জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে নির্দেশনা পাওয়ায় এ বিষয়ে নজরদারী বাড়িয়েছেন তারা। প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ আসেনি। সেসব যাত্রীদের ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যাবে তাদের পরীক্ষা করা হবে। যে কারণে ঢালাও ভাবে কারো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
ইমিগ্রেশনে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের তালিকা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীদের জানিয়ে দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মীরা তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানিং মেশিনে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন। কোনো গড়মিল পাওয়া গেলে যাত্রীকে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে এডিস এজিপ্টি নামে এক প্রজাতির মশার মাধ্যমে বাহিত `জিকা ভাইরাসের` কারণে মায়ের পেট থেকেই নানা সমস্যা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে শিশু। যার কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এ ভাইরাসে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকায় `জিকো ভাইরাস` ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
জামাল হোসেন/এআরএ/এমএস